খবরে প্রকাশ, উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে দলিত সম্প্রদায়ভুক্তদের সাথে ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্তদের সংঘর্ষ হচ্ছে। মাসাধিক কাল ধরে চলা দফায় দফায় সংঘর্ষে এখনো অবদি বেশ কয়েকজন মারা গেছে। ঘর পুড়েছে। এর চেয়েও বড়ো খবর, গতকাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার সাহারানপুর এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।
এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে গত এক মাস ধরে কী ঘটছে?
=> ১৪ এপ্রিল ছিল আম্বেদকর জয়ন্তী। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মদিন। জাতগত নিপীড়নের শিকার অন্ত্যজদের প্রিয় মানুষ এই বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর। ভারতের শাসকবর্গ চিরকাল বাবাসাহেবকে তোল্লা দেয়, দলিতদের সন্তুষ্ট করার জন্য। যাই হোক, ১৪ এপ্রিল তাঁর জন্মদিনের সাতদিন পর, অর্থাৎ ২০ এপ্রিল সাহারানপুরের বিজেপি এমপি রাঘব লখনপাল-এর নেতৃত্বে আম্বেদকার “শোভাযাত্রা” বের করা হয়, সাহারানপুরের জনকপুরি থানা এলাকার সড়ক দুধলি গাঁও এলাকায়। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই এই “শোভাযাত্রা” বের করা হয়। এই অঞ্চলে আম্বেদকর জয়ন্তীর মিছিল বেরোনোর ওপর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা ছিল গত সাত বছর ধরে। কারণ, এই মিছিলের রাস্তায় পড়া মুসলিম এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের বাতাবরণ তৈরির আশঙ্কা। যাই হোক, এবার উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার গঠন হওয়ার পর বিজেপির এমপি লখনপালের নেতৃত্বে এই শোভাযাত্রা বের করার হুঙ্কার দেওয়া হয়েছিল এবং তা বাস্তবায়ন করাও হয়। লখনপাল হুঙ্কার দেয়, ‘সাহারানপুরকে কাশ্মীর বানাতে দিচ্ছি না।’ উল্লেখ্য, সাহারানপুরে বেশ ভালো রকম মুসলিম বসতি রয়েছে, যদিও তারা সংখ্যাগুরু নয়।
মাঝরাস্তায় মুসলিম সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় শোভাযাত্রা বাধার সম্মুখীন হয়। রাস্তার ওপর একটা ট্রাক্টর দাঁড় করিয়ে দিয়ে শোভাযাত্রার রাস্তা আটকানো হয়। তর্কাতর্কি শুরু হয়। যারা শোভাযাত্রার বিরোধিতা করছিল, তারা আশপাশের বাড়িগুলো থেকে পাথর ছোঁড়ে এবং পাথরে শোভাযাত্রার গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। তারপর পুলিশ আসে। পুলিশের গাড়ির ওপরও আক্রোশ দেখায় স্থানীয়-রা। তখন আরো বড়ো বড়ো পুলিশ অফিসাররা এসে পৌঁছয় এবং একই সাথে বিজেপি সাংসদ রাঘব লখন পাল শর্মা এবং এমএলএ রাজীব গুম্বর এসে পৌঁছয়। শোভাযাত্রা সেইখানেই স্থগিত হয়ে যায়। পুলিশ শোভাযাত্রাকারী এবং শোভাযাত্রার বিরোধী — দুপক্ষকেই মারধোর করে। আশপাশের জেলা থেকেও পুলিশ এনে জড়ো করা হয়। উল্লেখ্য, এই লখনপাল শর্মার ওপর দুটি দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
=> ২১ এপ্রিল লখনপালের নেতৃত্বে একদল বিজেপি কর্মী জেলার সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ লাভ কুমারের বাড়িতে হামলা করে। বাড়ির সিসিটিভি ভেঙে দেওয়া হয়। এসএসপি-র নেমপ্লেট ভেঙে দেওয়া হয়। এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়ে লখনপাল একটি ছোটো ভাষণ দেন, যাতে তিনি বলেন, “যদি পুলিশের মাথায় একটু বুদ্ধি থাকত, তাহলে তারা আমাদের মিছিল না আটকে যেসব বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া হয়েছে, সেই সব বাড়ি রেইড করত। এবং আমাদের শোভাযাত্রা শেষ করতে দিত। কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ কাপ্তান নালায়েক (এসএসপি-কে স্থানীয়ভাবে কাপ্তান বলে ডাকা হয়)। এবার এই কাপ্তানকে সরানো হবে। বদলে আরেক কাপ্তান আসবে এবং আমাদের মিছিলের অনুমতি দেবে। আমরা এর পর ৫০০০ লোক শোভাযাত্রা করব।” তারপর লখনপাল বলেন, তাদের এই শোভাযাত্রা সার্থক। এই শোভাযাত্রা শেষবিন্দুতে পৌঁছনোর মাত্র ১০০ মিটার আগে ভেস্তে গেছে। গত সাত বছরে এই প্রথমবার এত বড়ো শোভাযাত্রা হলো। যাই হোক, কিছুদিনের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশে আরো বহু পুলিশ অফিসারের মতো লাভ কুমারকেও ট্র্যান্সফার করিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
=> বিজেপি সংঘ পরিবারের নেতৃত্বে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দলিতদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া অনেকদিন ধরেই চলছিল। তার সফল প্রয়োগে তৈরি হযেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। দলিত ও মুসলিম অধ্যুষিত সাহারানপুর জেলায় মায়াবতীরা ২০১২ সালে সাতটির মধ্যে তিনটি আসন পেয়েছিল। কিন্তু এবার একটাও আসন পায়নি। কিন্তু দলিতদের মধ্যে সবাই এটা মেনে নেয়নি। কারণ ঐতিহাসিকভাবে দলিতদের দমিয়ে রেখেছে তথাকথিত উঁচুজাতরা, যাদের মধ্যে পড়ে ঠাকুররা। দ্বন্দ্বটা দেখানো হচ্ছিল হিন্দু-মুসলমান বলে, কিন্তু আদতে দ্বন্দ্বটা ছিল ঠাকুর বনাম দলিত। উঁচু জাতের অত্যাচার রোখার জন্য ২০১৫ সালে তৈরি হয় ভীম সেনা। যার নেতৃত্বে ছিল চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ নামে এক যুবক।
=> সাহারানপুর জেলারই আরেকটা গ্রাম সাব্বিরপুর, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ঠাকুর সম্প্রদায়ের, যারা হিন্দুদের মধ্যে উঁচু জাত বলে পরিচিত এবং ক্ষমতাশালী। এবছর আম্বেদকর জয়ন্তীতে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল সাব্বিরপুরে দলিতদের অন্তর্গত যাতভ জাতের কিছু মানুষ বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্ট্যাচু বসানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু গ্রামের উঁচু জাতের ঠাকুরদের একটা অংশ তাদের বাধা দেয় এবং বলে, পুলিশ প্রশাসনের পারমিশন ছাড়া স্ট্যাচু বসানো যাবে না। যদিও দলিত সংগঠনগুলির দাবি, বাইরে এই কথা বললেও, আসলে ঠাকুর-অধ্যুষিত সাব্বিরপুর গ্রামে ঠাকুর-ক্ষমতা আতঙ্কিত হয় দলিতদের আম্বেদকর স্ট্যাচু বসানোর দাবিতে।
=> ৫ মে ছিল রাণা প্রতাপ সিংহের জন্মদিন (মতান্তরে ৯ মে)। রাণা প্রতাপ সিং-কে রাজপুত ঠাকুরদের অস্মিতার প্রতীক হিসেবে দেখানোর প্রয়াস সংঘ পরিবারের তরফে অনেকদিন থেকেই শুরু হয়েছে। সাহারানপুরের সাব্বিরপুরের কাছাকাছি আরেকটি গ্রাম শিমলানা। ওইদিন দলে দলে ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোক মিছিল শুরু করে রাণা প্রতাপ সিং-এর মূর্তি নিয়ে। মিছিলে আশেপাশের গ্রামগুলি থেকে কিছু ক্ষত্রিয় অংশ নিয়েছিল। সেই মিছিল চড়া সুরে বাজনা বাজাতে বাজাতে ঢোকে সাব্বিরপুরে, যেখানে কয়েকদিন আগে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তি বসানো আটকেছিল ঠাকুররা। এবার এই রাণা প্রতাপ জয়ন্তীর মিছিল আটকায় দলিতরা, চড়াসুরে গান বাজনা বন্ধ করতে বলে। প্রশ্ন তোলে, পুলিশ পারমিশন আছে কি না তা নিয়ে। তাদের মিছিল আটকানোয় ঠাকুররা অন্তত ২৫টি দলিত ঘরে আগুন দেয়। একজন মারা যায়, সে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ৩৫ বছরের যুবক, পাশের একটি গ্রামের, নাম সুমিত রাজপুত। মিছিলকারীরা বলে, গ্রামের যেসব দলিত মিছিলে বাধা দিয়েছিল, তারাই মেরেছে। দলিতরা বলে, সে দলিতদের ঘরে আগুন লাগাতে গিয়ে মারা গেছে। পুলিশ আসা আটকাতে মিছিলকারী ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস্তা জ্যাম করে দেয়। পুলিশ দেরিতে এসে সতেরো জনকে গ্রেফতার করে। ১৫ জন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মহারাণা প্রতাপ সিং-এর জন্মদিনে মিছিল এইবার নতুন। দলিত সংগঠনগুলোর তরফে দাবি করা হয়, এটা আরএসএস-বিজেপির বানানো রাণাপ্রতাপ জয়ন্তী মিছিল। তারা দলিত ও মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য এই মিছিল ডেকেছে এবার। এটা যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হবার ফল।
৫ মে বেশ কয়েকটি দলিত ঘর ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয় সাব্বিরপুর গ্রামে, অভিযোগের তীর রাণা প্রতাপ জয়ন্তীর মিছিলকারীদের ওপর। ছবি সূত্র সাউথ লাইভ ওয়েবসাইট।
৫ মে সাব্বিরপুরে দলিত ঘর-এ আগুনে পুড়ছে গরুর গাড়ি। ছবি সাউথ লাইভ ও টু সার্কেলস ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া।
৫ মে সাব্বিরপুরে দলিত বসতি ও দোকানে আগুন লাগানো হয়। ছবি সাউথ লাইভ ওয়েবসাইট।
=> ৯ মে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাহারানপুরের গ্রামগুলো। দলিতদের নয়া সংগঠন ‘ভীম সেনা’ সাহারানপুর শহরে বিক্ষোভ দেখায়। ভীম সেনার তরফে ৯ মে ডাকা হয়েছিল মহাপঞ্চায়েত, সাহারানপুর শহরে। কিন্তু পুলিশ সেই মহাপঞ্চায়েতের অনুমতি দেয়নি। ওইদিন পুলিশ ঝামেলা করে এবং মারধোর শুরু করে ভীম সেনা অ্যাকটিভিস্টদের। ফলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। সরকারের তরফে মৃত ঠাকুর সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দলিতদের যে ২৫ ঘর পুড়েছে, তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, এই অভিযোগ তোলা হয়। এইভাবে আরএসএস-বিজেপি সরকার তার ক্ষত্রিয়-প্রেম প্রকাশ করে ফেলেছে, দাবি করে ভীম সেনা। ‘ভীম সেনা’র বিক্ষোভে একটা বাস, ১০ টা মোটর সাইকেল এবং একটা গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তিন পুলিশকর্মী এবং একজন সাংবাদিকও আহত হয়। একটি পুলিশ চৌকিতেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়। সাহারানপুর শহরের রাণা প্রতাপ সিং-এর স্ট্যাচুও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করে। ভীম সেনার নেতাদের ওপর নকশালদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা প্রেসকে জানায় পুলিশ। এমনকি তাদের ওপর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এ মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়। ভীম সেনার তরফে উত্তেজক পোস্ট ও ছবি হোয়াটস-অ্যাপে ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ আসে। যদিও ভীম সেনা সরাসরি এই মহাপঞ্চায়েত ও বিক্ষোভের আয়োজক ছিল না, কিন্তু প্রাকারান্তরে এরাই আয়োজক, জানায় পুলিশ।
=> ভীম সেনা-র নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু চন্দ্রশেখর রাবণ পালিয়ে থাকে। ২১ মে ভীম সেনা দিল্লির যন্তরমন্তরে সমাবেশের ডাক দেয়। পুলিশ পারমিশন না থাকলেও এই সমাবেশে পুলিশের হিসেব মোতাবেক প্রায় পাঁচ হাজার লোক হয়। সমাবেশে আত্মপ্রকাশ করে চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ। এই সমাবেশ ছিল ভীম সেনা ও অন্যান্য দলিত সংগঠনের নিজস্ব। কোনো প্রচার না থাকা সত্ত্বেও যন্তর মন্তরের এই সমাবেশে উপস্থিতি ছিল তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।
=> ২৩ মে সাহারানপুরে মায়াবতীর সভা ছিল। এই সভা উপলক্ষ্যে ফের গোলমাল ছড়ায়। অভিযোগ, সভাফেরত একাংশ দলিত সাব্বিরপুর গ্রামে ঠাকুরদের কিছু বাড়িতে ঢিল ছোঁড়ে, এবং সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনে। অন্যদিকে সভাফেরত একটি গাড়ি আটকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে ঠাকুরদের আগ্রাসী কিছু মানুষ। তাতে একজন দলিত যুবক, আশিস (২৪) মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন। দলিত সংগঠনগুলো অভিযোগ করে, ওইদিন আক্রমণ চালায় ঠাকুরদের বকলমে আরএসএস-বিজেপি, এবং তারা শুধু দলিতদের আক্রমণ করেনি, মুসলিম বস্তিতেও আক্রমণ শানায়।
=> ২৫ মে ভীম সেনার তরফ থেকে বলা হয়, তাদের সংগঠন শেষ করে দিতে ষড়যন্ত্রের নকশা বুনেছে আরএসএস-বিজেপি। তাদের আইটি সেল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের নামে ফেক ওয়েবসাইট খুলে সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করেছে আরএসএস-বিজেপি। কিন্তু এভাবে আজাদকে দমন করা যাবে না। ওই একই দিনে পুলিশের একটি রিপোর্ট ফাঁস হয় মিডিয়ায়, যাতে নাকি বলা আছে যে চন্দ্রশেখরকে নাকি বলতে শোনা গেছে যে যে গ্রামে কম ঠাকুর বসতি আছে, সেই গ্রামকে ঠাকুর শূণ্য করে দেওয়া হবে। ওই একই দিনে মায়াবতী বলেন, ভীম সেনার সঙ্গে বিএসপি-র কোনো যোগ নেই। বিএসপি ঠাকুর-দলিত উভয়েরই পক্ষে। ভীম সেনা বিজেপির বানানো সংগঠন বলে মন্তব্য করেন মায়াবতী।
আপডেট —কিন্তু এতবড়ো অভিযোগের পরও ভীম সেনার পক্ষ থেকে মায়াবতীকে কোনো সমালোচনা করা হয়নি। বরং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। মায়াবতীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভীম সেনার পক্ষ থেকে ফেসবুকে ২৫ মে রাত এগারোটা নাগাদ যে মন্তব্যটি করা হয়, সেটি নিম্নরূপ —
मैं ऐडवोकेट चन्द्र शेखर आजाद आप सब को ये बता देना चाहता हु कि भीम आर्मी आपका एक अराजनैतीक संगठन है । जिसका काम समाज के खिलाफ हो रहे शोषण का विरोध करना और उसे सभी हदो तक रोकना है जो हमारी एकता से सम्भव है ।इसलिए गैरराजनीतिक रूप से एक होना जरूरी है ।अतः आपसे निवेदन है इस सामाजिक क्रांति में सहयोग करे और इस नारे को आगे बढ़ाए ।आवाज दो हम एक है
जय भीम नीला सलाम
जय भीम आर्मी जय साहब काशीराम
-एडवोकेट चन्द्र शेखर आजाद
(আমি অ্যাডভোকেট চন্দ্রশেখর আজাদ আপনাদের সবাইকে এটা জানিয়ে দিতে চাই যে ভীম সেনা আপনাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। যার কাজ হলো [বহুজন] সমাজের বিরুদ্ধে হয়ে চলা শোষণের বিরোধিতা করা এবং তা সার্বিকভাবে রুখে দেওয়া, যা কেবল আমাদের একতার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই অরাজনৈতিক রূপে এক হওয়া জরুরি। তাই আপনাদের কাছে নিবেদন এই সামাজিক বিপ্লবে সহযোগিতা করুন এবং এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে চলুন। আওয়াজ তোলো, আমরা একতাবদ্ধ। জয় ভীম। নীল সেলাম। জয় ভীম সেনা জয় সাহেব কাশীরাম। — অ্যাডভোকেট চন্দ্রশেখর আজাদ।) এই অংশটা আপডেটেড হলো ২৮ মে ==========================
ভীম সেনা সংগঠনটি ২০১৫ সালে তৈরি। তৈরি করেছিল চন্দ্রশেখর। এএইচপি ইন্টার কলেজে ঠাকুর ছেলেরা একজন দলিত ছেলের হাত ভেঙে দিয়েছিল তাদের সামনে জল খাওয়ার জন্য। এইসব ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য এই সংগঠনটি তৈরি করা হয়। ভীম সেনার প্রেসিডেন্ট বিনয় রতন সিং স্ক্রোল ডট কম্কে জানান, কলেজে দলিতদের হেয় করত ঠাকুররা এবং তাদের দিয়ে বেঞ্চ পরিষ্কার করাতো। ভীম সেনা হস্তক্ষেপ করে। এরপর এইসব বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামে দলিত সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘দ্য গ্রেট চামার’ বলে একটি বোর্ড লাগানোর বিরোধিতা করেছিল ঠাকুর সম্প্রদায়ের কিছু লোক। তখন আবার ভীম সেনার ডাক পড়ে। এমনকি একটি প্রাইভেট জমিতেও দলিতদের অস্মিতার প্রকাশসূচক একটি বোর্ড বসাতে দিতে আপত্তি ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্ত ওই মানুষদের, এতটাই তীব্র তাদের জাত্যাভিমান। এইখানেও ভীম সেনার হস্তক্ষেপে বোর্ডটি বসানো হয়। আরেকটি ঘটনায়, এক দলিত বর ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তাকে জোর করে ঘোড়া থেকে নামায় কিছু ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোক। গ্রামের দলিতরা তখন ভীম সেনাকে ফোনে ডাকে। এবং সেই বর আবার ঘোড়ায় চাপে। সম্মান ফিরে পায়। এই মে মাসের সংঘর্ষের সময়ও ভীম সেনার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঠাকুর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এক দলিত পোয়াতি মহিলার ওপর হামলা করেছে।
ভীম সেনার পোস্টার। স্ক্রোল ডট কম থেকে নেওয়া।
নিচে যন্তর মন্তরে ভীম সেনা নেতা চন্দ্রশেখর আজাদের ভাষণের বঙ্গানুবাদ রইল। এটি ভেলিভাদা ডট কম-এ ইংরেজি বয়ানটির বাংলা করা। ======================
যারা সারা ভারত থেকে এখানে এসেছেন, তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, চন্দ্রশেখর কখনও আপনাদের আমার ও ভীম সেনার প্রতি সমর্থনকে ভুলবে না। আজ ২১ মে দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ায় দাসত্ব মোচন হয়েছিল, আর আজ আমরা এখানে ঘোষণা করছি, আমরা ভারতে দাসত্ব শেষ করছি আজ। আমরা ‘নিচ’ নই, না আমরা ‘অছ্যুত’, না আমরা ‘নিম্নতর জাত’-এর লোক, আমরা সবাইকার পিতা।
আমাদের পরীক্ষা নিও না। আমি আজ মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলছি, আমরা আম্বেদকরপন্থীরা কখনোই নকশাল নই, কিন্তু আমাদের বোনেদের ইজ্জত বাঁচাতে আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, যা ঠিক নাও হতে পারে। তাই আমাদের পরীক্ষা নিও না। আমরা আম্বেদকরপন্থী, আমরা কখনোই তাহলে ওরকম কোনো পদক্ষেপ নেবো না।
এটা হলো ন্যায়বিচারের আরেকটি লড়াই-এর শুরুয়াত। এটা তৃতীয় স্বাধীনতার লড়াই। কতদিন অবদি এই লড়াই চলবে? যতদিন না আমরা জিতছি, ততদিন। এটা তোমাদের দায়িত্ব, এই লড়াইটা লড়া।
যদি আমাকে গ্রেফতার করা হয় এবং জেল-এ পাঠানো হয়, তাহলে তার প্রতিবাদে ধরনায় বোসো না। বরং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নোটিশ পাঠিও এবং তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলো যারা সাহারনপুরে ৫৬ জন দলিতের ঘর পুড়িয়েছে। ২৫ জনের দোকান পুড়িয়েছে। সেই দলিত ভাই বোনেদের সমর্থনে আওয়াজ তুলো যারা আহত হয়ে হাসপাতালে এবং যারা মিথ্যে মামলায় জেল-এ বন্দী। আমি চন্দ্রশেখর, জেল-এ যেতে প্রস্তুত। আমার জন্য অনশন কোরো না।
দিল্লির যন্তর মন্তর এ ২১ মে ভীম সেনার সমাবেশের ছবি রাহুল সোনপিম্পলের ফেসবুক পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া।
একজন আন্না হাজারে প্রতিবাদ করেছিল এবং সে পুরোদস্তুর মিডিয়া সাপোর্ট পেয়েছিল। আমি প্রশ্ন করতে চাই, কতজন আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসবে যদি আমরা ভারতের সংবিধানের মধ্যেই কোনো প্রতিবাদ সংগঠিত করি?
আমরা সমগ্র বহুজন সমাজের সঙ্গে লড়াই করি, যার মধ্যে আছে দলিত, ওবিসি, মুসলিম, বাল্মিকী কৌম, আমরা একসাথে লড়াই করি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এবং কেউই আমাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলির অনেক অসুবিধা আছে, কারণ তাদের সব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ভোট চাইতে হয়, কিন্তু চন্দ্রশেখর কখনো মাথা নোয়ায় নি, মাথা নোয়াবে না।
যারা এই প্রতিবাদকে সফল করেছেন, তারা খুবই পরিশ্রম করেছেন। আমার ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভীম সেনার অন্যান্য সদস্যরা আছে, মনে রেখো, তা চন্দ্রশেখর বলছে।
এটা সমতার জন্য লড়াই। আমরা অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ছি। আমরা ক্ষমতা নেওয়ার জন্য লড়ছি না। আমরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ছি।
যারা আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনকে ফোন করে ভয় দেখাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ছি, এবং আমরা যদি অত্যাচার শুরু করি, তাহলে এই সব বিদেশি আর্যরা পালাবে। এটা আমাদের দেশ। আমরা এটাকে ভাগ করতে দেবো না। বরং যেমন এককালে আমরা এই দেশ শাসন করেছি, আবার আমরা এই দেশ শাসন করব। এরকমই বলেছেন বাবাসাহেব আম্বেদকর।
সারফরোশ কি তামান্না আব হামারে দিল মে হ্যায়।
দেখনা হ্যায় জোর কিতনা বাজু-এ-কাতিল মে হ্যায়।
ওয়াক্ত আনে পর বাতা দেঙ্গে, তুঝে আয় আসমান।
হাম আভি সে কেয়া বাতায়ে কেয়া হামারে দিল মে হ্যায়।
এটা সেই সমাজের লড়াই, যা সংবিধানে থাকা সত্ত্বেও ন্যায়বিচার পায় না। আমি জাস্টিস কারনান-কে বলতে চাই, হতাশ হবেন না। রাজনীতির লোকেরা হয়ত তোমার পক্ষে দাঁড়াবে না। কিন্তু সামাজিক সংগঠনের লোকেরা তোমার পক্ষে থাকবে। এবং ন্যায়বিচার আনবে। এই দেশ-এ যদি কেউ ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়ায়, তাহলে এই মনুবাদীরা তাদের বলে নকশাল ও সন্ত্রাসবাদী। আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করো, তোমরা অকম্মার ঢেঁকি এসসি-এসটি দের নির্বাচন করে পার্লামেন্টে পাঠাবে না। আমাদের উত্তরপ্রদেশের সেই সব জনপ্রতিনিধিরা, যারা দলিতদের ওপর অত্যাচার দেখেও মুখ খুলছে না, আমাদের মায়েদের ও বোনেদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে দেখেও মুখ বুঁজে আছে, আমাদের তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে, তাদের নির্বাচিত না করে।
২৩ মে তোমাদের নিজ নিজ এলাকার প্রশাসনের কাছে গিয়ে জানাও দলিতদের ওপর অত্যাচারের কথা। বহুজন সমাজকে একসাথে লড়াই করতে হবে। এবং যদি কন্যাকুমারীতে কোনো অত্যাচার হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে কাশ্মীরেও। যদি আমরা তা করতে পারি, তাহলে আর কোনো অত্যাচার হবে না।
আমার নাম রাবণ। কারণ রাবণ তার বোনের ওপর অত্যাচার হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেছিল, এবং সে সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে এলেও তাকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি এবং তাকে সম্মান করেছিল। এই হলো রাবণ। আমি আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা করি কারণ সে মহিলাদের শ্রদ্ধা করত। আমি শ্রদ্ধা করি সেই মানুষটিকে যে বলেছিল, “আমি কখনও বিয়ে করব না, আমি কখনও সম্পত্তি করব না, আমি কখনও আমার বাড়ি যাব না, আমি আমার বাকি জীবনটা উৎসর্গ করব ফুলে-আম্বেদকর আন্দোলনের লক্ষ্য পূরণের জন্য।”
আমি সাহেব কাশিরামের সন্তান। যতদিন আমি বাঁচব, আমি আমার সমাজের জন্য বাঁচব, অন্যথায় আমি বাঁচব না, এই মঞ্চ থেকে আমি এই ঘোষণা করলাম।
আরেকটা কথা, আজ বাড়ি ফিরে গিয়ে, নিজেদের বাড়ির দেওয়ালে লিখে রেখো, আমাদের এই দেশটার শাসক হয়ে উঠতে হবে। মূলনিবাসীরা এই দেশটার শাসক। আমরা মরে যাব তবু ব্রাহ্মণ্যবাদী সিস্টেমের দিকে যাব না।
চন্দ্রশেখর উধম সিং হয়ে উঠবে, যদি দলিতদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হয়। আমি আম্বেদকর এবং উধম সিং – উভয়েই বিশ্বাস করি। এই চাড্ডিওয়ালা ব্রাহ্মণ্যবাদীরা, তারাই হলো ‘নিচ’ শ্রেণীর লোক, যারা হাজার হাজার বছর ধরে ধর্ম এবং জাতের নামে আমাদের লুঠছে। যদি তারা কোনো কিছুকে ভয় পায়, তবে সেটা হলো বৌদ্ধ ধর্ম। ২৩ মে ঘোষণা করো, যদি নির্দোষ দলিতরা জেল থেকে ছাড়া না পায়, তাহলে আমরা বৌদ্ধধর্মে চলে যাব। এই কথা বললে, চাড্ডিওয়ালা সংঘীদের প্যান্টে পেচ্ছাপ হয়ে যাবে।
এই দেশের সংবিধান লিখেছে আমাদের বাবা। আমরা সমস্ত উপায়ে সমস্ত অধিকার নেব।
কেউ মাছেদের সাঁতার শেখায় না। সংবিধানকে তোমাদের ধর্মপুস্তক করে তোলো, যদি এই ব্রাহ্মণ্যবাদের সাথে লড়াই করতে চাও। এই সংবিধানের প্রভিশনগুলোকে ভালো করে পড়ো এবং শেখো। পুলিশ এবং মিডিয়ার উচিত এটা ভালো করে শোনা, যাতে তারা তাদের লাঠিটা কয়েক মুহুর্তের চেয়ে বেশি সময় দলিতদের ওপর উঁচাতে পারে। এবার দলিতরা জেগে উঠেছে। যেখানেই দলিতদের ওপর অত্যাচার হবে, চন্দ্রশেখর সেখানে পৌঁছে যাবে, তার ফয়সালা করতে। মনে রেখো।
ঐক্যবদ্ধ থাকো এবং হিরো ভজনা কোরো না, তাহলে আমাদের ন্যায়বিচারের আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে।
যদি কেউ ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন করে, তাহলে মনুবাদীরা তাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। যদি সে সেটা জেতে, তাহলে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদের টাকা দিয়ে তার বশ্যতা কিনে নেয়, যদি সে নিজেকে না বেচে, তাহলে তাকে মেরে ফেলা হয়। আমি বলতে চাই, যদি ওরা একটা চন্দ্রশেখরকে মারতে চায়, তাহলে আরো লক্ষ জন্ম নেবে। আমরা কথা বলি, সমতার জন্য, স্বতন্ত্রতার জন্য, ন্যায়ের জন্য। আমাদের চ্যালেঞ্জ কোরো না।