@নিজস্ব প্রতিবেদন
মধ্যপ্রদেশে মন্দসৌরে কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের গুলি এবং তাতে পাঁচ চাষির মৃত্যুর ঘটনা আমাদের কাছে এসে পৌঁছচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে। অনেকের কাছেই এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির ব্যর্থতা। এবং কংগ্রেসের ভারতের রাজনীতিতে পুনরুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। কারণ, মধ্যপ্রদেশে সরকার বিজেপির। বিজেপি-কংগ্রেস দ্বৈরথ পেরিয়ে রক্তে-মাংসে কৃষক আন্দোলনের হদিশ পেতে এই পেজটা। এখানে আস্তে আস্তে মধ্যপ্রদেশের এই আন্দোলনের রিসোর্স ও আলোচনা যুক্ত হবে।

বিদ্রোহের চরিত্র : চাষিদের শহর অবরোধ, শহরে ফসলের জোগান বন্ধ
১ জুন থেকে ভারত কিষান ইউনিয়ন ১০ দিন ব্যাপী মন্দসৌর শহর অবরোধের ডাক দেয় এবং গ্রাম থেকে কৃষিজ পণ্য এবং দুধ শহরে যাওয়া আটকাতে থাকে। গ্রাম থেকে যারা শহরে কৃষিপণ্য নিয়ে আসছিল তাদের নিরুৎসাহ করা, ফিরে যেতে বলা ও প্রয়োজনে বাধাদান ও শস্য ও দুধ রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই অবরোধ চলতে থাকে। মহারাণা প্রতাপ বাস স্ট্যান্ড, সীতামক্ত ফাটক, গোল চৌহারার সবজি মান্ডিতে অবরোধ চলে। রামটেকরি আর জনতা কলোনিতে দুধের ডিপোয় রাখা দুধ ফেলে দেওয়া হয়। গ্রাম থেকে দুধের গাড়ি আসা বন্ধ হয়ে যায়। সব্জি নিয়ে আসা গাড়ির সংখ্যাও কমে যায়। পাইকারি সব্জি মাণ্ডি এবং কৃষি মাণ্ডি শনি ও রবি, দুদিনের জন্য বন্ধ থাকার ঘোষণা করে দেওয়া হয়। টমেটো, ধনে, লঙ্কার দাম চারগুণ বেড়ে যায় (টমেটো ১০/- কেজি থেকে ৪০/- কেজি, ধনে ১০-১৫ /- কেজি থেকে ১৫০/- কেজি ইত্যাদি)।
যে যে কারণে এই বিদ্রোহ :
২ জুন অবরোধের সংগঠক ভারত কিষান ইউনিয়নের মন্দসৌর জেলা সম্পাদক ভারত সিং বোরানা বলেন, কৃষকদের ৯০ শতাংশের সমর্থন নিয়ে এই আন্দোলনে নামা হয়েছে। আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, শহরে দুধ ও সবজি নিয়ে আসা চাষিদের অনুরোধ করা হচ্ছে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কোনো জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে না। ১০ দিন এই আন্দোলন চলবে। তবুও সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন জঙ্গী হবে।
– किसान यूनियन की हड़ताल का 90 प्रश किसानों ने समर्थन किया है। हमने यूनियन के सदस्य किसानों से कहा है कि आंदोलन को शांतिपूर्वक चलाएं, जो भी व्यक्ति दूध और सब्जी लेकर आ रहे हैं उन्हें सड़कों पर नहीं ढोले और हाथ जोड़कर वापस चले जाने के लिए कहे। कुछ लोगों ने दूध ढोला है उन्हें भी समझाइश दे रहे हैं, ऐसा नहीं करें। हड़ताल का मंडी पर असर हुआ है। 10 जून तक हड़ताल चलेगी। फिर भी सरकार ने कोई निर्णय नहीं किया तो अगला रूख उग्र होगा।
-भारतसिंह बोराना, जिलाध्यक्ष, भारतीय किसान यूनियन
৪ জুন থেকে কৃষক আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নিতে থাকে। আক্রমণের লক্ষ্য মন্দসৌর শহরের সবজি ও ফল বিক্রেতা ব্যবসায়ীরা, অর্থাৎ যারা কৃষিজ দ্রব্য বিক্রি করে।
প্রথম তিনদিন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও, ৪ জুন রবিবার সন্ধ্যে থেকে মন্দসৌরের কৃষক অবরোধ আগ্রাসী চেহারা নিতে শুরু করে। বিকেল চারটের সময় পিপলিয়ামণ্ডীতে আন্দোলনকারী চাষিদের সভা ছিল। সন্ধ্যে ছ’টায় সভা শেষ হলে ট্রাক্টর করে চাষিরা মন্দসৌর শহরে চলে আসে এবং সব্জি ও ফলের দোকানে হামলা চালাতে থাকে। এক ঘন্টা ধরে চলা এই হামলায় তারা খোলা দোকানে ভাঙচুর করে, সবজি ও ফলের ঠেলাগুলি ফেলে দেয় এবং কিছু ফল ও সব্জি লুঠ করে নেয়। প্রথমেই তারা জুস সেন্টারের সমস্ত মোসম্বী রাস্তায় ফেলে দেয়। সারা শহর পরিক্রমার পর নেহরু বাস স্ট্যান্ড ও সংলগ্ন নেহরু উদ্যানের আশেপাশের দোকানপাটে হামলা চালায় এবং এবং সবজি ও ফল ব্যবসায়ীদের পসরা ফেলে দেয়। প্রশাসন অনুপস্থিত ছিল, পর্যাপ্ত পুলিশের অভাবে তারা রাস্তায় বেরোয়নি। দোকানদার ও ঠেলাওয়ালা ফল ও সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কৃষকদের বচসা শুরু হয়। রাত আটটার সময় কৃষকরা শহর ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায়, পরদিন ৫ জুন মন্দসৌর শহর বনধ্ হবে। কৃষকরা শহর মন্দসৌর ছেড়ে চলে যাবার পর বিক্রেতারা শহরের কোতোয়ালিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ও ঘেরাও করে। মন্দসৌর শহর ছেড়ে কৃষকদের একটা অংশ পিপলিয়ামণ্ডী এবং অন্য অংশটি দলৌদা চলে যায়।
৬ জুন কী ঘটেছিল : গ্রাম থেকে মন্দসৌর শহরের দিকে এগোচ্ছিল বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা, থামাতে গুলি
—————-

আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন পুলিশ আন্দোলনকারী কৃষকদের ওপর গুলি চালায় এবং তাতে পাঁচজন চাষি মারা যায়। পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পদবী পতিদার। উল্লেখ্য, গুজরাতে একবছর আগে প্যাটেল বিদ্রোহেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল জমি মালিক পতিদারদের।
আগেরদিন পাঁচই জুন সোমবার রাত থেকে জেলায় ব্রডব্যান্ড এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত দলৌদা-তে প্রথমে রাস্তা অবরোধ এবং পরে রেললাইন উপড়ে ফেলার চেষ্টার পর সিআরপিএফ-কে ময়দানে নামানো হয়। মঙ্গলবার সকালে দলৌদার পার্শ্বনাথ ফন্টের কাছে বিক্ষোভরত কৃষকদের উৎখাত করার জন্য সিআরপিএফ-কে পাঠানো হয়েছিল। দুপুর বারোটার পর কৃষকদের আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। প্রথমে অবরোধে আটক ট্রাকগুলোতে আগুন লাগাতে থাকে চাষিরা। আঠারোটা ট্রাকে আগুন লাগানোর পর বেশ কয়েকটি চারচাকা ও দুচাকার গাড়ি ভাঙচুরের পর ভিড়টা মন্দসৌর শহরের দিকে এগোতে থাকে। তাদের থামানোর জন্য পুলিশ এবং সিআরপিএফ তাদের হুঁশিয়ারি দিলে জনতা তাদের ওপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। দুপুর একটা সময় কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়। কিন্তু তাতেও উত্তেজিত কৃষকদের মন্দসৌর শহর যাত্রা আটকানো যায়নি। শেষমেশ গুলি চালায় সিআরপিএফ। প্রথমে শূণ্যে গুলি চালানো হয়, তাতেও জনতা না দমলে সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পুলিশ গুলি চালালে কৃষকরা মারা যেতে থাকে। কৃষকরা আরো ক্ষেপে যায়। পিপলিয়া মণ্ডী থানায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করে এবং বুদা ও মেলখেড়া পুলিশ চৌকিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ ফের কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। গুজব ছড়ায়, কয়েকজন পুলিশকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে চাষিরা। পিপলিয়ামণ্ডীর জনৈক অনিল জৈন-এর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় ক্ষুদ্ধ জনতা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সুবাসরা-তে ব্যবসায়ীরা ঠিক করেছিল, চাষিদের বিরোধিতা করে দুধ বিতরণ করবে এবং সবজি বিক্রি করবে। আন্দোলনরত কৃষকরা এর বিরোধিতা করে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের ঝামেলা লেগে যায়। পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। কাঁদানে গ্যাস-এ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় একজন। বিধায়ক হরদীপ সিং ডাঙ্গ ব্যাবসায়ী ও চাষিদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে গেলে কেউ মানেনি। (সূত্র : ‘নই দুনিয়া’ সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট)
======================================
যারা মারা গেছে, তাদের পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে মধ্যপ্রদেশের এই কৃষক আন্দোলনটিকে চেনা যাক। এই বর্ণনাটি আজ ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ কাগজে বেরিয়েছে।
————
অভিষেক দীনেশ পতিদার (১৯)
ক্লাস নাইনে পড়ত। মন্দসৌর-নিমাচ হাইওয়ের ওপর বারখেদা পন্থ গ্রামে বাড়ি। পরিবারের ২৮ বিঘা জমি, যদিও বাবা দীনেশ-এর ভাগটিও এখনও বাবার নামে লেখাজোখা হয়নি। খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয় এর ওপর। অভিষেক স্লোগান দিচ্ছিল শুধু, জানাচ্ছেন তার বাবা। গুলিতে অভিষেক মারা গেলে তার পরিবারের লোকেরা মৃতদেহটিকে উচ্চসড়কের ওপর নামিয়ে দিয়ে অবরোধ করে। জেলাশাসক তড়িঘড়ি ওখানে যায় বিশাল পুলিশ নিয়ে। ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীরা তাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে ফিরিয়ে দেয়।
অভিষেকের বাবা দীনেশ জানান, ওইদিন অকুস্থলে আশেপাশের ৩০ কিমির মধ্যে ৫০ টি গ্রাম থেকে অন্তত ৩ হাজার কৃষক অবরোধে সামিল হয়েছিল। তাদের গ্রাম থেকেও প্রতি ঘর থেকে একজন করে কৃষক আন্দোলনে গিয়েছিল।
किसान आंदोलन में शामिल होने के लिए बही चौपाटी पर आसपास के 30 किमी के क्षेत्र के 50 गांवों से 3 हजार से ज्यादा किसान इकट्ठा हुए थे। हमारे गांव से भी हर घर से एक किसान आंदोलन में शामिल हुआ था।
— अभिषेक के पिता दिनेश पाटीदार
পুনমচাঁদ (বাবলু) জগদীশ পতিদার (২২)
পিপলিয়ামাণ্ডী থানা থেকে পঁচিশ কিমি দূরে টাকরাবাদ গ্রামে বাড়ি। বাবা মারা যায় গত বছর। পরিবারের সাতবিঘা জমি। বাবা মারা যাওয়ার পর চাষের হাল ধরতে গিয়ে বিএসসি পড়তে পড়তে সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশুনা ছেড়ে দেয় পুনমচাঁদ। বিবাহিত। তার চিন্তা ছিল, সে হয়ত সয়াবিন, রসুন এবং গম চাষের খরচই তুলতে পারবে না এবার, যেহেতু এবার ফসলের দাম তলানিতে। তাই পুনমচাঁদ যোগ দিয়েছিল আন্দোলনে। পুনমচাঁদ তখন জল খাচ্ছিল, এবং অন্যান্য চাষিদের সঙ্গে গল্প করছিল, তখন পাশ থেকে একটা পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল এবং গুলি চালানো হয়। তার বন্ধু কান্তিলাল পতিদার জানান, পুলিশ কোনো হুঁশিয়ারি দেয়নি। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত কাঁদানে গ্যাস ছুড়বে। কিন্তুই সরাসরি গুলি চালিয়ে দেয়। প্রথম বুলেটটা লাগে পুনমচাঁদের। দ্বিতীয়টি কানাইলালের।
চৈনরাম গণপত পতিদার (২৩)
২৯ এপ্রিল বিয়ে হয়েছিল। বাবার ২ বিঘারও কম জমি। মূলত খেতমজুরিই বৃত্তি। তিনবার আর্মিতে যোগ দেওয়ার পরীক্ষা দিয়েছিল চৈনরাম, শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় পাশ করে গেলেও চোখের একটা কমজোরির কারণে বারবার বাতিল হয়ে যায়। পরিবারের আরো বড়ো জমি ছিল, কিন্তু ১৯৭০ সালে একটি জলাধারের নির্মাণের জন্য বেশিরভাগ জমিই অধিগ্রহণ করে নেয় সরকার। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এত কম ছিল, যে সেই টাকায় অন্যত্র জমি কিনতে পারেনি পরিবার। ফলে শুরু হয় কঠিন জীবন।
সত্যনারায়ণ মাঙ্গিলাল ধাঙড় (৩০)
চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো। মন্দসৌর থেকে ২০ কিমি দূরে লোধ গ্রামে বাড়ি। ক্লাস সেভেন অবদি পড়েছে। দিনমজুরি বৃত্তি। বিয়ে থা করেনি। পরিবারের ৬ বিঘা জমি আছে, কিন্তু তার কাগজ হয়নি এখনো। তবে ওই জমি থেকে পরিবারের যা আয়, তার চেয়ে দিনমজুরি করে বেশি আয় করত সত্যনারায়ণ। বাবা মাঙ্গিলালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আধার কার্ড লাগবে। আধার কার্ড-ও নেই। সরকার এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে, সেই টাকা ব্যাঙ্কেই আসার কথা।
কানাইলাল ধুরিলাল পতিদার (৪৪)
ছিরোদ পিপলিয়া গ্রামে বাড়ি। দুই সন্তান। একজনের বয়স ষোলো। একজনের এগারো। বড়োটি মেয়ে। স্কুলে পড়ে দুজনেই। তার এবং তার তিন ভাইয়ের সাত বিঘা জমি আছে। প্রতিবেশি সুরেশ চন্দ্র পতিদারের কথায়, কানাইলালের ভয়ডর ছিল না, কারণ ওদের প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। পুলিশ যখন ওকে ডাকে তখন ও ভেবেছিল কথা বলার জন্য ডাকছে, কিন্তু গুলি করে দেয়। বড়ো ভাই কালুরাম জানায়, চাষে এখন কোনো লাভ নেই। খরচই তোলা যাচ্ছে না ফসল বেচে।
==========================================