কিছু সহনাগরিকের তৈরি করা এই প্রস্তাবটি ‘বসুন্ধরায় আজাদি’ পোর্টেলের সম্পাদকমণ্ডলী সকলের বিবেচনার জন্য এখানে প্রকাশ করছে। এই প্রসঙ্গে পাঠকের মূল্যবান মতামত লেখাটির কমেন্ট সেকশনে দেবার জন্য অনুরোধ রইল।
———————–
করোনা অতিমারি দেড় বছর পেরিয়ে দুই বছরের দিকে যাচ্ছে। এই অতিমারির অভিঘাত এখনও চলছে, যদিও ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ এখন অনেকটাই স্থিমিত, অন্ততঃ আমাদের চারপাশে। কড়া বিধিনিষেধ এখন নেই, যদিও স্কুল কলেজ এখনও বন্ধ। লাইব্রেরি বন্ধ। মিটিং মিছিল এখনও বেআইনি (ক্ষমতাধরদের কথা আলাদা)। ট্রেন চলাচল এখনও স্বাভাবিক নয়। রাত্রে এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি।
যদিও ইউরোপ আমেরিকায় এবং এশিয়ার নানা প্রান্তে এখন এই অতিমারির ‘তৃতীয় ঢেউ’ চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের টিকাকরণ হয়ে যাবার পরেও ইজরায়েল ব্রিটেন আমেরিকা এবং ইউরোপের নানা রাষ্ট্র এই তৃতীয় ঢেউ থেকে রেহাই পায়নি। আমাদের এখানে ‘তৃতীয় ঢেউ’ আসার সম্ভবনা রয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে।
‘দ্বিতীয় ঢেউ’ এর অভিজ্ঞতা
অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, গত বছর অক্টোবর নভেম্বর মাসে করোনার প্রথম ঢেউ স্থিমিত হয়ে যাবার পরে সবাই যখন ধরে নিয়েছিলাম, করোনা অতিমারি পেরিয়ে এসেছি, সেই সময় রূপ বদল করে ফের হানা দিয়েছিল এই ভাইরাস, মার্চ মাসে। ততদিনে সরকারও ঘোষণা করে দিয়েছিল যে অতিমারি শেষ। টিকা দেওয়া সদ্য শুরু হয়েছিল তখন। আশা কর্মী, এসএসকে সহ জনস্বাস্থ্যের সমগ্র নেটওয়র্কটাকে তখন হয় নির্বাচনের কাজে অথবা টিকাকরণের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ঢেউ-এর সময় এই জনস্বাস্থ্যের নেটওয়র্কটিই কাজ করেছিল গ্রামে বা শহরে, করোনা রোগী নির্ধারণে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থায়। এবং কনটেনমেন্ট, সেফ হোমে প্রেরণ ইত্যাদি অতিমারি ম্যানেজমেন্টে। এবার সেসবের বালাই ছিল না। মানুষও গুরুত্ব দেয়নি, ভেবেছিল করোনা আর পাঁচটা ফ্লু-এর মতো এলেবেলে হয়ে গেছে। এই অসাবধানতার মধ্যে দিয়েই এসেছিল দ্বিতীয় ঢেউ। আমরা দেখেছিলাম আমাদের চারপাশে অনেকেই মারা যাচ্ছে, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার হচ্ছে, বেডের জন্য এবং নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের জন্য হাহাকার হচ্ছে। দেখেছিলাম প্রাইভেট হাসপাতালগুলির সুযোগ বুঝে রোগীর পরিবারকে পথে বসিয়ে দিয়েছিল। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে সমাজের একটা বড়ো অংশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই অক্সিজেন, বেড, ওষুধ ইত্যাদির খোঁজ দিতে। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুমুর্ষু রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেবার কাজে। ঝাঁপিয় পড়েছিল পাড়ায়, ক্লাবে, অ্যাপার্টমেন্টে মিনি হাসপাতাল বানানো-তে, যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকবে ভেন্টিলেটর থাকবে ইত্যাদি প্রভৃতি। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল টিকার খোঁজে।
কিন্তু পরে বোঝা গেল, আক্রান্ত হবার প্রথম সপ্তাহে যথাযথ চিকিৎসা হলে হাসপাতাল অক্সিজেন ভেন্টিলেটর এসব কিছুই লাগে না। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই অসুস্থতা শুরু হবার প্রথম চার পাঁচদিন গুরুত্ব দেয়নি, চিকিৎসা করায়নি, সঠিকভাবে চিকিৎসা পায়নি, বা ভুল চিকিৎসা পেয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই হয়ত সুস্বাস্থ্যের কারণে গুরুতর দশায় পৌঁছয়নি। কিন্তু যারা গুরুতর দশায় পৌঁছেছে, তারা এই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু ঠিক সময়ে পেয়েছিল কি না, সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে। পরবর্তীতে প্রথম সপ্তাহের চিকিৎসার সঠিক প্রটোকল বুঝে গিয়ে চিকিৎসকরা অনেকেই টেলিমিডিসিনের সাহায্যে বহু রোগীকে বাড়িতেই ভালো করেছেন নির্বিঘ্নে, রোগী যোগাযোগ করলে। এলাকাগতভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজস্ব উদ্যোগের মধ্যে দিয়েও এই প্রাথমিক চিকিৎসা পৌঁছেছে বাড়ি বাড়ি। দেখা গেছে, এই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু অত্যন্ত কম খরচে হওয়া সম্ভব।
সরকার থেকে টিকা নেওয়া ও মাস্ক পরা ইত্যাদি অর্থাৎ ব্যক্তির সংক্রমিত না হওয়ার ও সংক্রমণ না ছড়ানোর চেষ্টা করা-কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে বা হচ্ছে; তুলনায় প্রাথমিক সিম্পটমগুলিকে অবহেলা না করা, টেস্ট করানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা করানো-কে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। তবে এটাও ঠিক, এটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করার সাথে সাথেই প্রয়োজন এর উপযুক্ত জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো, কমিউনিটি মেডিসিন-এর ভিত্তিতে। তা-ও অপর্যাপ্ত এবং যতটা ছিল তা অন্য কাজে ব্যপৃত ছিল। করোনার টেস্ট করানোর নিখরচার সরকারি বন্দোবস্ত প্রথম ঢেউ-এর সময় যতটা ছিল ধীরে ধীরে তা অমিল হতে হতে গেছে। ইচ্ছে করে টেস্ট কমানো হয়েছে। আবার টেস্ট রিপোর্ট না থাকায় তাকে সরকারি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি — অ্যাম্বুলেন্স বা বেড দেওয়া যায়নি। তবে পরবর্তী কালে পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হয়েছে।
করোনা অতিমারি মোকাবিলায় টিকা-নির্ভরতার নানাবিধ বিপদ
টিকা কাজ করছে কিনা সেই প্রশ্নে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও, বরং বাড়ছে। এমনিতেই ট্রায়াল ভালোভাবে না করে টিকাগুলো এসেছিল। অতিমারির মুখে টিকা দেওয়া কতটা উচিত, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েই গেছে। সরকারি তরফে প্রথমে বলা হচ্ছিল, যাদের অ্যালার্জি ইত্যাদি আছে তারা টিকা নিতে পারবেন না। তারপর দেখা গেল, সেসবের বালাই নেই। কিন্তু কেন এই বদল তা ঠিক বোঝা গেল না। এখন আবার অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে; কিন্তু সহজাত প্রতিরোধশক্তির প্রাবল্য থাকা সত্ত্বেও কেন বাচ্চাদের টিকা লাগবে? এই জরুরিকালীন টিকা কেনই বা দেওয়া হবে শিশুদের যাদের করোনায় অসুস্থ হবার হারই খুব কম? শরীরে টিকার দীর্ঘকালীন প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কেনই বা শিশুদের টিকা দেওয়া হবে যাদের পুরো জীবনটা পড়ে আছে? যাই হোক, প্রথমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এ মৃত্যুর জন্য টিকা না পাওয়া এবং টিকা না নেওয়াকে দোষ দেওয়া হচ্ছিল। পরে দেখা গেল, টিকার একটি ডোজ যারা নিয়েছে তারা তো বটেই, দুটি ডোজ নেবার পরেও বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এবং মারাও গেছে। সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণাতেও তা দেখা যাচ্ছে। আরো জানা যাচ্ছে, টিকা নিলেও আক্রান্ত যেমন হচ্ছে, তেমনি ছড়াচ্ছেও ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে। যদিও টিকার দু-ডোজ পাওয়া মানুষজনের বেশিরভাগই ভাবছেন, আর করোনা ছুঁতে পারবে না বা মারতে পারবে না। ফলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে, আক্রান্ত হলেও তারা প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেবে না টিকা নেওয়া আছে বলে, এবং প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে গুরুতর দশায় পৌঁছবে এবং হাসপাতাল অক্সিজেন ভেন্টিলেটর ছাড়া উপায় থাকবে না। নানা জায়গায় ঢুকতে টিকার শংসাপত্র বাধ্যতামূলক করে বা ‘ইউনিভার্সাল ভ্যাক্সিন পাস’ ইস্যু করে মানুষের মধ্যে এই ভুল ও ঝুঁকিপূর্ণ মনোভাবকে উৎসাহিতই করা হচ্ছে সরকারিভাবে, যা শুধু নিন্দনীয় নয় খুবই দুর্ভাগ্যজনকও বটে।
আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার আর দেরি না করে
করোনা-র তৃতীয় ঢেউ আসা বা দ্বিতীয় ঢেউ-এর দীর্ঘায়িত হওয়া অথবা ‘এন্ডেমিক’ দশায় চলতে থাকা — এসবের কথা মাথায় রেখে পরিকাঠামো তৈরি রাখার বাস্তবতা রয়েছে। এই ধরনের ভাইরাসজনিত অতিমারি ভবিষ্যতে আরো আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্যের একটি স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লাভ-ও রয়েছে। সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল বা মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল প্রয়োজন, কিন্তু এই ধরনের হাসপাতাল-কেন্দ্রীক স্বাস্থ্যচিন্তায় সাধারণ মানুষের লাভ সীমীত, তা সে যতই বীমা ইত্যাদির আওতায় আনা হোক না কেন আর সরকারি হাসপাতাল হোক না কেন। প্রাথমিক অবহেলায় রোগ একটা দূর অবদি গড়িয়ে গেলে এই সুপার-স্পেশালিটি বা মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতালের ওপর চাপ বাড়ে এবং চিকিৎসা-কর্পোরেটদের লাভের রাস্তা খুলে যায়। খুব অল্পদামের স্টেরয়েড বা ব্লাডথিনার যেখানে কার্যকরী, তার বদলে কর্পোরেট হাসপাতাল বেশি দামের ওষুধ দেওয়া হয়, অনাবশ্যক স্ক্যান ইত্যাদি করা হয় যার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিন্তু তাতে সঠিক সময়ে রোগ ধরা না পড়ার ফলে করোনা-র মতো মানুষবাহী ভাইরাস জনিত অতিমারির ক্ষেত্রে সমাজে সংক্রমণ-ও বাড়ে, দীর্ঘমেয়াদী রোগভোগের মধ্যে দিয়ে ভাইরাসের রূপভেদ তৈরি হবার সম্ভবনাও বাড়ে, তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যু বা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা তো বাড়েই। ফলে একমাত্র আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোই পারে ব্যক্তি ও সমাজ — উভয়কেই এই করোনা অতিমারি থেকে রেহাই দিতে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং জনসমাজে এরকম একটি ধারনা এখনও আছে যে টিকার মাধ্যমে করোনা অতিমারি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ফ্লু অতিমারিতে কোনো টিকাই সমস্ত মানুষকে স্বল্পমেয়াদে ও বেশিরভাগ মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিতে পারছে না। কিন্তু জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো যদি আগাম-সক্রিয় থাকে, তাহলে করোনা রোগ হলেও কেউ মারা যাবে না, এই পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব বলেই মনে হচ্ছে; এবং বিশেষতঃ যখন এই দেড় বছরে এই রোগটা এবং এর কী পদ্ধতিতে মোকাবিলা হবে, তার অনেকটাই জানা গেছে গবেষণা ও চিকিৎসা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে।
আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো কেমন হতে পারে? মহামারি পর্বে গ্রামীণ ডাক্তারদের ট্রেনিং দিয়ে কমিউনিটি চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, গ্রামের লোক তাদেরকে বেশি বিশ্বাস করে। তারাই যাতে সঠিকভাবে স্টেরয়েড ইত্যাদি ওষুধের ব্যবহার করতে পারে সেই ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন। দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষ হয় ওষুধের দোকান থেকে নয়ত গ্রামীণ ডাক্তারদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। ওষুধের দোকানদারদের-ও ট্রেনিং দেওয়া দরকার। একটি আদর্শ কমিউনিটি হেলথ টিমে থাকা উচিত – এলাকার সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধের দোকানদার, এলাকার যুবক যুবতী, রেজিস্টার্ড ডাক্তার।
করোনা অতিমারিকে কেন্দ্র করে জনজীবনে নেতিবাচকতার অবসান প্রয়োজন
করোনা অতিমারির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন এক অতিরিক্ত ঝকমারি হিসেবে হাজির হয়েছে জনজীবনে। স্কুল কলেজ বন্ধ অথবা অনলাইনে চলছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো হাতে-কলমে শেখার বিষয়গুলির শিক্ষা অনলাইনে কতটা হওয়া সম্ভব? এছাড়া অনলাইনে যে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা বেশ সমস্যাজনক অনেক দিক থেকে। অনলাইন ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগও থাকছে না। এবং এসবের চেয়েও সবচেয়ে সঙ্গিন বিষয় হল, বহু ছাত্রছাত্রী অনলাইন শিক্ষার আওতাতেই আসছে না। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে। যতটুকু যা হচ্ছে তা ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে যার সঙ্গে পকেটের জোর সরাসরি জড়িত। এই বিচিত্র ঘটনাটিকে কতটা শিক্ষা বলা যাবে তা ভবিষ্যৎ বিচার করবে, যদিও করোনা অতিমারির আগে যে শিক্ষাটি চলছিল সেটিরও অনেক খামতি ছিল। অবিলম্বে স্কুল কলেজ খোলা জরুরি এবং প্রতিটি স্কুলে ও কলেজে জনস্বাস্থ্য ইউনিট চালু রাখা / করা-ও দরকার যে ইউনিটটি নিয়মিত প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর স্বাস্থ্যের নজর রাখবে ও খোঁজখবর রাখবে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্ভবনা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যবসা বাণিজ্য স্কুল কলেজ অফিস কাছারি ট্রেন বাস খোলা থাকার ওপর। লাগাতার লকডাউন ও বিধিনিষেদের মধ্যে দিয়ে সেসবে এক নৈরাশ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সক্ষম পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে এবং মহিলাদের ওপর ঘরোয়া হিংসার ঘটনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতি আর চলতে পারে না এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বন্দোবস্ত এড়ানোর জন্য এখন থেকেই পদক্ষেপ জরুরি। টিকার পর টিকা নয়, গণজমায়েতের সমস্ত স্থায়ী পরিসরে আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোই এই লকডাউন বা বিধিনিষেধের কবল থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।
সংক্ষেপে,
* করোনা মোকাবিলায় টিকার প্রতি নজর দিতে গিয়ে অবহেলিত হয়েছে জনস্বাস্থ্য-র দিকটি এবং আমাদের দেশে ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ-এর অন্যতম প্রধান কারণ এটাই। এই পর্যায়ে অন্যান্য অসুখের চিকিৎসাও অবহেলিত হয়েছে।
* আগামী দিনে এই করোনা রোগের মোকাবিলায় আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণ ও তাকে জারি রাখা মূল কাজ।
* করোনা ও অতিমারিকে কব্জা করতে কমিউনিটি মেডিসিন ভিত্তিক চিকিৎসা-ব্যবস্থায় জোর দেওয়া দেওয়া উচিত বর্তমানে চালু সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্ভর ব্যবস্থার বদলে।
* জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহযোগে স্কুল ও কলেজ এক্ষুনি খোলা উচিত।
* লকডাউন নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না।
* করোনা অতিমারির মোকাবিলায় টিকার ওপর নির্ভরশীলতা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
* গণ পরিবহণ অফিস কাছারি কারখানা লাইব্রেরি স্কুল কলেজ গবেষণাগার বেড়ানোর জায়গা ইত্যাদি সমস্ত স্থায়ী জমায়েতের পরিসরে আগাম-সক্রিয় জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরীক্ষার বন্দোবস্ত তৈরি করা দরকার এবং নেতিবাচক সমস্ত পদ্ধতি (টিকা শংসাপত্র বা নেগেটিভ টেস্ট রেজাল্ট নিয়ে আসা) বাতিল করা উচিত।
আমরা এই পয়েন্টগুলি বিবেচনায় আনার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, সরকারি সংস্থা, অসরকারি সংস্থা, গণসংগঠন এবং ব্যাপকতর জনগণ-কে আহ্বান করছি। এই বিষয়গুলিতে যে কোনো বিতর্ক এবং আলোচনার-ও আহ্বান রাখছি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে মানুষের প্রয়াসের মাধ্যমে এই রোগকে কব্জা করে ফেলা সম্ভব।
প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ :
২) “দেখেছিলাম, এমনকি ডাক্তাররাও এপিডেমিক-এর সংজ্ঞা ভুলে বসে আছে”