প্রশ্নোত্তরে প্যালেস্তাইনের ওপর ইজরায়েলের যুদ্ধ (২০২৩) : যুদ্ধ শুরু হল কেন?

ইজরায়েলের প্যালেস্তাইনের ওপর যুদ্ধ শুরু হয়েছে ৮ অক্টোবর, যার পোশাকি নাম ‘লোহার তরোয়াল’ । তাতে এখনও অব্দি ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গাজা ভূখণ্ডে প্রায় সাত হাজার মানুষ মারা গেছে যাদের প্রায় সবাই নিরস্ত্র নাগরিক, এবং প্রায় অর্ধেক অপ্রাপ্তবয়স্ক। আমরা কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই যুদ্ধ সম্পর্কে জানাবোঝা করতে চাইছি। পাঠকদের কাছে আবেদন, আরো প্রশ্ন করুন, এবং উত্তরগুলি সম্পর্কে মতামত দিন। — সম্পাদকমণ্ডলী।

১) গাজায় যুদ্ধ শুরু হল কেন?

৭ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার ভোরবেলা থেকে হামাস ও অন্যান্য অনেকগুলি প্যালেস্তাইনি সংগঠনের যোদ্ধারা ইজরায়েলের ওপর বহুমাত্রিক হামলা চালায়। ভূমধ্যসাগরে ইজরায়েলি নৌবাহিনীর ওপর হামলা করে নদীপথে; প্যারাগ্লাইডিং করে ইজরায়েলি ভূখণ্ডে নেমে পড়ে হামাস সহ অন্যান্য প্যালেস্তাইনি সংগঠনগুলির যোদ্ধারা; হাজার হাজার রকেট হামলা করা হয়; এবং গাজা সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে করে কয়েক হাজার সশস্ত্র প্যালেস্তিনীয় যোদ্ধা ঢুকে পড়ে।

হামলাগুলি হয় গাজা সীমানা লাগোয়া ইজরায়েলি সেটলারদের গ্রামগুলির1 ওপর এবং ইজরায়েলি আর্মি চেকপয়েন্টগুলির ওপর। একটি হামলা হয় দক্ষিণ গাজার খুব কাছের ইজরায়েলি শহর রেইম এর কাছাকাছি মরুভূমির মধ্যে চাঁদোয়া খাটিয়ে চলা একটি নাচ-গান-মজার উৎসবে2, যেখানে শুধু ইজরায়েলের নয়, নানা দেশের কয়েক হাজার মানুষ হাজির ছিল, যাদের অনেকেই কমবয়সী।

যদিও ইজরায়েলের স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণতঃ গাজা থেকে হওয়া সমস্ত হামলার কথা আগে থেকে জেনে যায়, কিন্তু এইদিনের হামলা আঁচ করতে পারেনি। এই সামগ্রিক হামলায় ইজরায়েলের অধিবাসী প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই নিরস্ত্র সাধারণ ইজরায়েলি। প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করে হামাস যোদ্ধারা, যাদের অপহরণ করার কারণ হিসেবে বলা হয়, এরা পণবন্দী, ইজরায়েলের হাতে আটক হওয়া প্রায় দশ হাজার প্যালেস্তিনীয়কে মুক্তি দিলে এদেরও মুক্তি দেওয়া হবে3

গোলাপী অংশটা গাজা (হামাস নিয়ন্ত্রিত, প্যালেস্তাইনি অধ্যুষিত) । নীল অংশটা হল ইজরায়েলি রাষ্ট্রের অন্তর্গত যে অংশটুকুতে ৭ অক্টোবর প্যালেস্তাইনি যোদ্ধারা ঢুকে পড়েছিল। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে।

এই হামলা ইজরায়েলের ইতিহাসে হওয়া সবচেয়ে বড়ো হামলা, এবং ১৯৭৩ সালের ইউম কিপ্পুর যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তির দিনে করা। একে ইজরায়েল সরকার তৎক্ষণাৎ ইজরায়েলের ৯/১১ মুহুর্ত (২০০১ সালে আমেরিকার ওপর আফগানিস্তানের তালিবানদের ঐতিহাসিক হামলার দিন ১১ সেপ্টেম্বর অনুকরণে) বলে ঘোষণা করে। এবং আকাশপথে পাল্টা হামলা শুরু করে গাজার ওপর। শুরু হয় ইজরায়েলের প্যালেস্তাইনের ওপর যুদ্ধ (২০২৩)।

২) হামাস এরকম হামলা চালাতে গেলই বা কেন?

হামাস গাজার শাসক সংগঠন। তাদের যেমন প্রশাসনিক অংশ আছে, তেমনি তাদের মিলিটারি অংশও আছে। এই হামলা চালিয়েছে হামাসের মিলিটারি অংশ। এবং বহুদিন ধরে পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় হামাস ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি প্যালেস্তাইনি সংগঠন জড়িত ছিল।

হামাস ইজরায়েল বিরোধী সংগঠন এবং তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল, প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে (যার অংশ হল সামরিক পদ্ধতি) গোটা প্যালেস্তাইনকে মুক্ত করা, এবং আরব ভূমিতে ইহুদি রাষ্ট্র (ইজরায়েল) বিলোপ করা। গোটা প্যালেস্তাইন বলতে তারা মনে করে, ভূমধ্যসাগর থেকে শুরু করে জর্ডন নদী, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল গঠিত হবার আগের গোটা প্যালেস্তিনীয় আরবভূমি4। গোটা প্যালেস্তাইনের মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিরোধ আন্দোলন চলছে। এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে হামাস সহ অন্যান্য সংগঠনগুলি মাঝে মাঝেই ইজরায়েলের ওপর হাতুড়ে প্রযুক্তির রকেট নিক্ষেপ করে থাকে গাজা থেকে। এই রকেটগুলির বেশিরভাগই আকাশ পথেই ধ্বংস করে দেয় ইজরায়েলের অত্যন্ত উন্নত স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া, রকেট আসার সংবাদ আগেই চলে আসে ইজরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়, এবং তা থেকে যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সে কারণে ইজরায়েলে স্বয়ংক্রিয় সাইরেন সিস্টেমও আছে, যা ইজরায়েলের নাগরিকদের আগে থেকে জানিয়ে দেয়, বাঙ্কারে চলে যেতে বা আড়াল নিতে, যাতে রকেটের নিচে না পড়তে হয়।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইজরায়েল সবুজ দাগ এর মধ্যেকার অংশগুলি দখল করে। ২০১১ সালের মানচিত্রে হলুদ অংশ প্যালেস্তিনিয়ান বসতি। অর্থাৎ ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বেশিরভাগ অংশ ইজরায়েলি বসতি এবং ইজরায়েল নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া সিরিয়ার গোলান হাইট-ও ইজরায়েল দখল করে রেখেছে। যদিও ২০০৫ সালে ইজরায়েল গাজা থেকে নিজেদের সৈন্য ও সেটলমেন্ট তুলে নেয়, কিন্তু এখনও গাজার নাগরিকদের দেশের বাইরে যেতে গেলে বা কোনও কিছু আমদানি করতে গেলে ইজরায়েলের অনুমতি লাগে। ছবি উইকিপিডিয়া থেকে ।

কিন্তু ৭ অক্টোবরের হামলা এতদিনকার সমস্ত হামলার চেয়ে আলাদা এবং তীব্র। শুধু সশস্ত্র ইহুদি সেটলারদের গ্রাম আক্রমণ নয়, মরুভূমিতে উন্মুক্ত নাচ-গানের উৎসবে নিরস্ত্র আমোদরত যুবকযুবতীদের ওপর সশস্ত্র হামলা এবং প্রায় তাড়া করে সেখানে আড়াইশো জনকে হত্যা ও সবমিলিয়ে গ্রাম ও উৎসব প্রাঙ্গন থেকে কয়েকশ’ মানুষকে অপহরণ গোটা পৃথিবীতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিছু ঘটনা ক্যামেরাবন্দী হয়, কিছু হামাস যোদ্ধাদের বুকে লাগানো স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায় ধরা পড়ে (পরে সেই যোদ্ধা হয়ত ফেরার পথে ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে মারা গেছে, সেক্ষেত্রে তার বুকের ক্যামেরা ইজরায়েলের হাতে পড়ে এবং ইজরায়েল সেগুলির বাছাই করা অংশ মিডিয়াতে প্রচার করে)। এই লাইভ প্রদর্শনী সারা দুনিয়াতেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

হামাসের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইজরায়েলি চরমপন্থীদের হামলা, অধিকৃত প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ডে ইজরায়েলি সেটলমেন্ট এবং সেখানকার অধিবাসী ভবঘুরে আরবীদের ওপর ইজরায়েলি সেটলারদের সশস্ত্র আক্রমণ5, এবং গাজা ভূখণ্ডকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে এই আক্রমণ চালিয়েছে।

৩) এটা তো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, তাই না?

আমরা স্কুলে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের কথা পড়ি — যেমন মাস্টারদা সূর্য সেন, বাঘাযতীন, প্রফুল্ল চাকি ও ক্ষুদিরাম। এছাড়া নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস একটা গোটা সেনাবাহিনী (আজাদ হিন্দ ফৌজ) গঠন করে ইংরেজদের আক্রমণ করেছিলেন উত্তর-পূর্ব দিক থেকে। শান্তিপূর্ণ পথে স্বাধীনতা আন্দোলন চালানো কংগ্রেস ইত্যাদি সংগঠনের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী ও সামরিক পদ্ধতিতে স্বাধীনতা আন্দোলন করা সংগঠনগুলির বিরোধ ছিল। নিঃসন্দেহে হামাসের হামলা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোটেই নতুন কিছু ব্যাপার নয় বা অচ্ছুৎ বিষয়ও নয়। ক্ষুদিরাম নিয়ে বহুল প্রচলিত একটা গান আছে, যেটায় বিলাপ করে বলা হয়, “হায় রে, বড়লাটকে মারতে গিয়ে মাগো মারলাম ইংল্যান্ডবাসী”। যা থেকে বোঝা যায়, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নিরীহ নাগরিককে হত্যা করে। এ খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার, কিন্তু তা অস্বাভাবাকিও নয়।

বস্তুতপক্ষে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি, প্যালেস্তাইনি জনগণের মুক্তিসংগ্রাম কেবলমাত্র এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনার মধ্যে দিয়েই বাকি পৃথিবীর কাছে গুরুত্ব পায়। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বছরের পর বছর সওয়াল করলেও কোনও লাভ হয় না। এই কারণেই ইজরায়েলি সেটলারদের ওপর হিংসাত্মক পাল্টা-আক্রমণ দুনিয়ার নজর ফেরাতে সাহায্য করে, যা এবারেও করেছে6

তবে যদি ইচ্ছা করে মরুভূমিতে চাঁদোয়া খাটিয়ে নাচগান আমোদরত ইজরায়েলীদের মারা হয় সন্ত্রাসবাদী হানায়, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে, লাইভ ভিডিও রেকর্ডিংগুলি থেকে ও পালিয়ে বাঁচা মানুষদের বয়ান থেকে, তাতে মনে হচ্ছে, সেটাই হয়েছে — এবং সে কারণেই এই হামলাটিকে নিন্দনীয় বলা হচ্ছে। যদিও হামাস সংগঠনের এক অন্যতম শীর্ষনেতা ২৪ অক্টোবর একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে এই হত্যাকান্ডটিকে অনভিপ্রেত এবং জটিল পরিস্থিতিতে ঘটে যাওয়া বলে অভিহিত করেছেন7। পরে ইজরায়েলি নিরাপত্তা বিভাগও স্বীকার করেছে, এটা হামাসের টার্গেট ছিল না আদতে। অধিকৃত ভূখণ্ডে সেটলারদের আক্রমণ করা আর অস্থায়ী চাঁদোয়া খাটিয়ে নাচ গান আমোদরত ইজরায়েলবাসীদের আক্রমণ করা এক নয়। অধিকৃত জায়গায় সেটলারদের গেঁড়ে বসা আটকাতে, অস্ত্র হাতে তাদের সরাসরি আক্রমণ করা — প্রতিরোধ আন্দোলনে এই ধরনের আক্রমণ বা ইন্তিফাদা প্যালেস্তাইনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

৪) তার মানে হামাসের এই হামলা কি সমর্থনযোগ্য?

নাচ-গানের উৎসবে সশস্ত্র হামলা ও নৃশংসতা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং নিন্দনীয়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইজরায়েলি সেটলারদের নিরাপত্তামোড়া গ্রামগুলির ওপর প্যালেস্তিনীয় সংগঠনগুলির সশস্ত্র আক্রমণ, রকেট হামলা এবং ইজরায়েলি নাগরিকদের বন্দী করে বন্দী প্রত্যার্পন এর জন্য ইজরায়েলকে চাপ দেওয়া সম্পর্কে আমরা নিন্দা করতে পারি না, কারণ এগুলি প্যালেস্তাইনি মুক্তি সংগ্রামের অঙ্গ এবং যে সংগ্রামের যথেষ্ট ন্যায্যতা আছে ও যে সমস্যার সমাধান হয়নি।

ইজরায়েল ২০০৫ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীর মতামত অগ্রাহ্য করে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজা ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল, তারপর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা সশস্ত্র হামলার পর ২০০৫ সালে গাজা থেকে সরে যায়, কিন্তু ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে সরেনি। যদিও এখনও গাজা ইজরায়েল কর্তৃক অবরুদ্ধ, একটি জেলখানার মতো। তার ওপর ইজরায়েল গাজার বাইরে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং ইজরায়েল অধিকৃত গোটা আরবভূমিতে তারকাঁটা দিয়ে দিয়ে অবরোধ করে সেখানে ইউরোপ আমেরিকা থেকে আসা সেটলারদের জায়গা করে দিচ্ছে এখনও। এইভাবে প্যালেস্তিনীয় ভূমি থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উচ্ছেদ করে তা দখল করা চলেছে আজ বহু দশক ধরে। এই অবরোধ এবং দখলের বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয়দের ক্ষোভ এবং লড়াই আছে। যার জঙ্গি প্রতিনিধি হল হামাস। ফলে হামাসের রকেট হামলা বা সশস্ত্র আক্রমণ প্যালেস্তিনীয় স্বাধীনতার আন্দোলনের অংশ।

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি বলেছেন, হামাসের হামলা আকাশ থেকে পড়েনি, তার কারণ আছে, তা হল প্যালেস্তিনীয়দের দম আটকানো ইজরায়েলি অবরোধ8। আমাদের ভারতবাসীদেরও প্যালেস্তিনীয় মুক্তি সংগ্রামকে সামগ্রিকভাবে সমর্থন করা প্রয়োজন। ঔপনিবেশিক শাসনে দুশো বছর কাটানো এবং সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে তার থেকে মুক্তির ইতিহাস আছে আমাদের, ফলে তা বিস্মৃত না হলে আমাদের প্যালেস্তিনীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া স্বাভাবিক।

চলবে

টীকা

  1. গাজা সীমান্তবর্তী এই ইজরায়েলি গ্রামগুলি (পোশাকি নাম কিবুজ বা কৃষিজীবীদের বসতি) গত শতকের চল্লিশের দশকের পর থেকে আশির দশক পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছিল ইহুদি অভিবাসীদের সেটলমেন্ট হিসেবে। কয়েকশো মানুষের বাস এই গ্রামগুলি তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা, এবং বাসিন্দারা সকলেই অস্ত্রচালনায় দক্ষ। মূলতঃ অস্ত্র হাতে এখানকার আদি বাসিন্দা আরবদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েই এইসব গ্রামগুলি গড়ে ওঠে এবং টিঁকে থাকে। তবে এখন ইজরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কাঁটাতারের বেড়া এদের সুরক্ষা অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়েছিল, হামাসের এই হামলার আগে অবদি। এরকম যে সমস্ত গ্রামের ওপর হামলা হয়, সেগুলি হল — কার আজা, নেটিভ হাসারা, বিরি, নির ওজ, ইত্যাদি। ↩︎
  2. ইজরায়েলে এই নাচ-গান-মজার অনুষ্ঠানগুলি কমবয়সীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। ১৯৯০ এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবগুলি এখন প্রায় সপ্তাহান্তিক মুক্তির জায়গা হয়ে গেছে রকেট হামলার সাইরেনের শব্দ-র চাপ এবং আদ্যন্ত পুঁজিবাদী অর্থনীতির চাপে বিধ্বস্ত ইজরায়েলি তরুণ তরুণীদের কাছে। সাধারণ এই উৎসবগুলি সংগঠিত হয় গোপনে, গোপন জায়গায় চাঁদোয়া খাটিয়ে। ফলে পুলিশি নিরাপত্তাও থাকে না, কারণ পুলিশের নজর এড়িয়ে করা হয় এগুলি (তবে ৭ অক্টোবর রেইম-এর উৎসবে পুলিশি নিরাপত্তা কিছুটা হলেও ছিল)। এই উৎসবগুলি বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, গান, নাচ, মৌতাত ও অবাধ স্বাধীনতার। এইসব উৎসবে অংশগ্রহণ মানুষকে আমূল বদলে দেয়, তাকে যুদ্ধ ও পণ্যসংস্কৃতি থেকে বাঁচায়। এই লিঙ্কে এই ধরনের উৎসবে যোগ দেওয়া একজন কমবয়সী তরুণীর একটি সাক্ষাৎকার আছে↩︎
  3. আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার বন্দোবস্ত-র মাধ্যমে ইজরায়েলি রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে ইজরায়েল প্যালেস্তিনীয়দের বসতিগুলিকে, যথাক্রমে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা এবং প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিশেষতঃ হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা, যেখান থেকে ইজরায়েলের ওপর মাঝেমাঝেই সাধারণমানের রকেট হামলা হয়। এসব জায়গার সীমানায় প্যালেস্তিনীয়দের নানা ছুতোয় বন্দী করা ইজরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর রাখার অন্যতম হাতিয়ার। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি হিসেব অনুযায়ী অন্ততঃ চার হাজার প্যালেস্তিনীয়কে বন্দী করে রেখেছে ইজরায়েল, যার মধ্যে অন্ততঃ একশ’ সত্তর জন অপ্রাপ্তবয়স্ক, এবং বারোশ’ জন বিনা বিচারে বন্দী। ১৯৬৭ সাল থেকে এখনও অব্দি প্রায় এক লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে বন্দী করেছে ইজরায়েল। বিস্তারিত এই লিঙ্কে। ↩︎
  4. সেই ষাটের দশক থেকেই প্যালেস্তাইনি মুক্তি সংগ্রামের একটি অন্যতম স্লোগান — ফ্রম রিভার টু সি, প্যালেস্তাইন উইল বি ফ্রি। এই রিভার মানে জর্ডন নদী। আর সি মানে ভূমধ্যসাগর। এই স্লোগানের ভেতরের অর্থ হল — ইহুদি রাষ্ট্রের বিলোপ ঘটিয়ে গোটা প্যালেস্তিনী ভূখন্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্থাপন। অর্থাৎ এই স্লোগান ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র — উভয়ের সার্বভৌম অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের যে ‘দুই-রাষ্ট্র’-র সমাধান — তাকে অস্বীকার করে। তবে প্যালেস্তাইনি ও আরব বুদ্ধিজীবীদের অনেকে মনে করেন, এই স্লোগান মোটেই অত কিছু ভেবে দেওয়া নয়, তা স্বাধীনতাকামী প্যালেস্তিনি জনতার মুক্তির আকাঙ্খার প্রকাশ মাত্র। ↩︎
  5. প্যালেস্তিনীয় বাসভূমিতে বা ইজরায়েলি সেটলমেন্ট বা বসতি স্থাপন এবং অস্ত্রের জোরে সেগুলিকে বজায় রাখা এবং আরবদের তাড়ানোর ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিককালেও এইগুলি চলছে। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল — যুদ্ধ শুরু হবার পর-ও ইজরায়েলি সেটলাররা সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে আরবি বেদুইনদের বসতিগুলি উচ্ছেদ করেছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। এই লিঙ্কে তার মানবিক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে↩︎
  6. কেন এই হিংসাত্মক হামলা চালানো হল, তাই নিয়ে আমেরিকান প্যালেস্তিনি বুদ্ধিজীবীদের একটি কথোপকথন পাওয়া যাবে এখানে। সেটায় বলা আছে, শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিগুলি (বয়কট, রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তব্য) ইজরায়েল রাষ্ট্রকে মোটেও বিব্রত করে না বা করেনি, এবং দুটি হিংসার মধ্যবর্তী পর্যায়ে কীভাবে পশ্চিমী দুনিয়া প্যালেস্তাইনের কথাটা ভুলে যায়। ↩︎
  7. ২৪ অক্টোবর ২০২৩ লেবানন টিভিতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হামাস সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা গাজি হামাদ বলেন, “We did not want to harm civilians, but there were complications on the ground, and there was a party in the area, with [civilian] population… It was a large area, across 40 kilometers… ↩︎
  8. “It is important to also recognize the attacks by Hamas did not happen in a vacuum,” Guterres said. “The Palestinian people have been subjected to 56 years of suffocating occupation. They have seen their land steadily devoured by settlements and plagued by violence; their economy stifled; their people displaced and their homes demolished. Their hopes for a political solution to their plight have been vanishing.” ↩︎

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *