প্রচ্ছদ ছবিটি ১৫ সেপ্টেম্বর ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ এর ডাকে করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্যভবন মিছিলের।
??=> জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মিটিং-এ কী দাঁড়ালো?
@@=> স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানরত ডাক্তারদের সঙ্গে মিটিং প্রথমদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি থাকবেন না, এই ভুল-বোঝাবুঝি তে ভেস্তে যায়। সেদিনের আমন্ত্রণপত্রে মূলতঃ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি নিয়ে আলোচনার ডাক দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, তার আগে ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে কীভাবে সরকারি পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে — তা নিয়ে তুমুল প্রচার করেছিল শাসক দল। একদিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী নিজে অবস্থানমঞ্চে গিয়ে সন্ধ্যেবেলা তার বাড়িতে মিটিং-এ আমন্ত্রণ জানান। মিটিং-এর শর্ত দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা আগেই — মুখ্যমন্ত্রীকে থাকতে হবে, মিটিং-এর লাইভস্ট্রিমিং হতে হবে, ডাক্তারদের পাঁচদফা দাবি নিয়ে হবে আলোচনা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী লাইভস্ট্রিমিং-এ আপত্তি জানানোয় ভেস্তে যায় সেদিনের মিটিং-ও। ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার জুনিয়র ডাক্তার্স ফ্রন্টের ডাকে কলকাতায় বিশাল মিছিল হয়। সংহতি মূলক মিছিলও হয় একাধিক। ১৬ সেপ্টেম্বর লাইভস্ট্রিমিং ছাড়াই মিটিং হয়। সেই মিটিং শেষে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, “কিছু দাবি মানা হল, কিছু দাবি মানা হল না। কিছু কথা বলা গেল, কিছু বলা গেল না।…” এর বিস্তারিত জানা যায় মিটিং-এর উভয়পক্ষ স্বাক্ষরিত মিনিটস-এ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এরপর সাংবাদিক সম্মেলন করে মিটিং-এ কী হল তা বিস্তারিত জানান। পরে জুনিয়র ডাক্তাররাও জানান সাংবাদিক সম্মেলন করে। এবং তারা এও জানান, তাদের দাবিগুলি মানা হচ্ছে, তার বাস্তব ইঙ্গিত পেলেই তারা কর্মবিরতি তুলে নেবেন।
মিটিং-এ ঠিক হয়, রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্তে সিবিআই-কে সম্পূর্ণ সাহায্য করবে। কলকাতা পুলিশের সিপি এবং ডিসি নর্থ কে ট্রান্সফার করা হবে। স্বাস্থ্যভবন থেকে DME এবং DHS কে ট্রান্সফার করা হবে। সিসিটিভি, ওয়াশ রুম ইত্যাদি র জন্য বরাদ্দ একশ’ কোটি টাকা খরচ কীভাবে হবে তা স্বাস্থ্যজগতের লোকদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোগী কল্যাণ সমিতিকে পুনর্গঠন করা হবে, এবং তাতে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স তৈরি করে জুনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেয় রাজ্য সরকার। অভিযোগ জানানো এবং তার সুরাহার জন্য একটা ফলপ্রসূ বন্দোবস্ত চালু করা হবে সব হাসপাতাল এবং কলেজে। জুনিয়র ডাক্তারদের রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে, কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। ডিসি সেন্ট্রাল এবং স্বাস্থ্যসচিবের ওপর কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিরোধিতা করে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট। থ্রেট কালচার কীভাবে দূর করা যায়, তার জন্য কীভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছাত্র ইউনিয়ন, রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বানানো যায়, তাই নিয়ে আরো কথা হবে। নিচে পুরো মিনিটস এর কপি দেওয়া হল।


??=> আচ্ছা, জুনিয়র ডাক্তাররা এই লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে এত জেদ করছে, সেটা কি ঠিক? সরকারের বেলায় এত কিছু, ডাক্তাররা যে রোগী দেখে তার লাইভ স্ট্রিমিং করার দাবি যদি তোলা হয়?
@@=> জুনিয়র ডাক্তাররা সরকারের প্রাত্যাহিক কাজকর্মের লাইভ স্ট্রিমিং চাননি। তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে বৈঠক হবে, তার লাইভ স্ট্রিমিং চেয়েছেন। কারণ, সাধারণতঃ দেখা যায়, এইরকম মিটিং শেষে সরকারের প্রতিনিধিরা বলে দেন, আলোচনা সদর্থক হয়েছে, সব মিটে গেছে। এর আগে দিল্লির কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের সঙ্গে সরকারের বহুবার ব্যর্থ বৈঠক হয়েছিল। প্রতিবার বৈঠকের শেষে দেখা যেত, সরকারের তরফে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে, আলোচনা সদর্থক হয়েছে। সব মিটে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও বৈঠকে সমস্যা মেটেনি। প্রধানমন্ত্রী তিনটি কৃষিবিল বাতিল ঘোষণা করার পরই কৃষকরা বাড়ি ফিরে গেছিল। এছাড়া, আরো একটা সমস্যা থাকে। যে সমস্ত প্রতিনিধিরা ভেতরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করতে গেলেন, তারা সেখানে কী বললেন, সেই নিয়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সরকারের তরফ থেকেও চেষ্টা থাকে, ভেতরে কি কথা হয়েছে তা নিয়ে মিথ্যে কথা প্রচার করে আন্দোলনকারী এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করতে। অনেক সময় প্রতিনিধিদের কিনেও নেয় সরকার। ফলে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক আজকের প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে লাইভস্ট্রিমিং করার দাবি মোটেও অন্যায্য নয়। প্রসঙ্গতঃ, কয়েক বছর আগে এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মিটমাটের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক লাইভস্ট্রিমিং করা হয়েছিল।
ডাক্তার-রা যখন অপারেশন করেন, তার ভিডিও রেকর্ডিং রোগীর আত্মীয় পরিজনদের দিয়ে দেওয়ার চল আছে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনার লাইভস্ট্রিমিং, বা তার ভিডিও রেকর্ডিং জুনিয়র ডাক্তার প্রতিনিধিদের দেওয়ার সঙ্গে ডাক্তারদের চিকিৎসার লাইভস্ট্রিমিং এর দাবিকে পাশাপাশি রাখার মধ্যে একটা গুলিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে — ফুল আর ফুলদানিকে একই চোখে দেখার মতো। সরকার আর ডাক্তার এক নয়। আমাদের দেশে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে, তা সর্বোচ্চ ক্ষমতা এবং সেই ক্ষমতা বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, এবং নির্বাচিত সংসদ — মূল এই তিন স্তম্ভে বিভক্ত। এছাড়া সেনাবাহিনীও আরেকটি স্তম্ভ, যা এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আলঙ্কারিকভাবে সর্বোচ্চ পদের অধীন। সরকার হল এই নির্বাচিত সংসদ / বিধানসভার থেকে তৈরি হওয়া, যার অধীন প্রশাসন। প্রশাসন হল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার এক্সিকিউটিভ বা কার্যকরী অংশ। সরকার হল এই ব্যবস্থার মাথাটা। একথা ঠিক, পরীক্ষা দিয়ে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হওয়া মানুষদের দিয়ে তৈরি প্রশাসন। তারা আমলা। তাদের নিচে আছে বাকি সব স্তরগুলি, সেগুলিও স্থায়ীভাবে নিযুক্ত। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাথায় আছে মন্ত্রীরা, যারা নির্বাচিত এবং স্থায়ী নয়। ফলে সরকার, বা প্রশাসনের নির্বাচিত মাথাদের সঙ্গে জনতা যদি কোনও বৈঠক করে, তার লাইভস্ট্রিমিং বা স্বচ্ছতার দাবি রাষ্ট্র তথা ক্ষমতার ব্যবস্থাটির গোপনতা একটু কমিয়ে তাকে স্বচ্ছ করার দাবি। তাতে রাষ্ট্রের বা ক্ষমতার ব্যবস্থাটির দাপট কিছুটা কমে। জনতা শক্তিশালী হয়। এর সঙ্গে চিকিৎসকের রোগী দেখা মেলে না। জনতা এবং রাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্ষমতাব্যবস্থার দুই মেরুর সম্পর্ক। চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক ক্ষমতাব্যবস্থার দুই মেরুর সম্পর্ক নয়। রোগীর রোগমুক্ত হওয়া এবং বেঁচে থাকা সম্পূর্ণভাবে তার নিজের শরীরের ওপর নির্ভর করে, চিকিৎসকরা আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার বিভিন্ন দিক (রোগনির্ণয়, ওষুধ, শল্যচিকিৎসা ইত্যাদি) প্রয়োগ করে রোগীকে রোগমুক্ত হতে সাহায্য করেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘স্বপ্নিল ত্রিপাঠি মামলা’য় প্রথম কিছু পাবলিক ইন্টারেস্টের মামলার লাইভস্ট্রিমিং-এর অনুমতি দেয়। সেই সময়ের বেঞ্চ বলেছিল, “Sunlight is the best disinfectant. Live-streaming as an extension of the principle of open courts will ensure that the interface between a court hearing with virtual reality will result in the dissemination of information in the widest possible sense, imparting transparency and accountability to the judicial process.” সুপ্রিম কোর্ট আরজিকর মামলার-ও লাইভস্ট্রিমিং করছে। রাজ্যের কৌঁসুলি কপিল সিবালের আপত্তি গ্রাহ্য করেনি কোর্ট।
??=> যাই হোক, সুপ্রিম কোর্ট আর কী বলল?
@@=> সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, রাজ্য সরকার যে নোটিস করে মেয়েদের রাতের ডিউটি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটা বাতিল। ছেলেদের এবং মেয়েদের কাজের ব্যাপারে কোনওরকম পার্থক্য রাখা যাবে না (নাইটি ডিউটি দেওয়া না দেওয়া বা কর্মসময় বিষয়ক)। ‘অনুজ গর্গ’ মামলায় মদের দোকানে মেয়েরা কাজ করতে পারবে না বিষয়ক পঞ্জাব সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সুরক্ষার ছদ্মবেশে মেয়েদের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। এছাড়া বলেছে, আরজিকর-এর হত্যা ও ধর্ষণ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআই এখনও অবদি যা খুঁজে পেয়েছে তা ভয়ঙ্কর।
জুনিয়র ডাক্তাররা সুপ্রিম কোর্ট-কে চারটি বন্দোবস্তের জন্য প্রেয়ার জানায়, ১) প্রতিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের (অ্যাকাডেমিক, নার্স, ডাক্তার ইত্যাদি) নিয়ে মনিটরিং কমিটি। ২) ছাত্র এবং ডাক্তারদের অভিযোগ নিরসনের জন্য গ্রিভেন্স রিড্রেসাল সেল। ৩) POSH 2013 আইন অনুযায়ী যৌন নির্যাতন রুখতে প্রতিটি হাসপাতালে ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি (ICC) গঠন। ৪) ডাক্তারদের কাজের কারণে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস লাঘব-এ সাইকোলজি ও সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় পেশাদার কাউন্সিলর নিয়োগ। এই প্রেয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ডাক্তারদের প্রতিটি প্রার্থনা যুক্তিযুক্ত, এবং রাজ্য যে তিনদিনের মধ্যে এগুলোর বন্দোবস্ত করে। জুনিয়র ডাক্তারদের উকিল ইন্দিরা জয়সিং জানিয়েছেন, ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে জিবি মিটিং বা সাধারণ সভা করবে আজ-কালের মধ্যে। ঠিক কবে কাজে ফিরবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, জিবি-র পর জানা যাবে। ইন্দিরা জয়সিং সুপ্রিম কোর্টে আরো জানায়, আরজিকর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ভয়জনিত মানসিক অস্থিরতা (fear psychosis) তৈরি হয়েছে। তাদের ধারনা হয়েছে, ওই মর্মান্তিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং যারা আন্দোলন করছে, তাদের ভবিষ্যতে খেসারত দিতে হতে পারে তাদের হাতে।
??=> এর পরিপ্রেক্ষিতে জুনিয়র ডাক্তাররা কী বলছে?
@@=> সুপ্রিম কোর্টের এইদিনের শুনানিকে স্বাগত জানিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা সমস্ত আন্দোলনকারীদের তরফে জানিয়েছে, তাদের চতুর্থ ও পঞ্চম দাবিগুলি যথাযথভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়া বাকি আছে। সেইগুলি নিয়ে সরকার সদর্থক পদক্ষেপ নিলেই জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্যভবনের সামনে কাজে ফিরবে। এছাড়া, আরজিকর-এর মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের নাইট শিফটে বিধিনিষেধের নির্দেশ জারি করা মুখ্যসচিবের অপসারণ-এর ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ কী হচ্ছে, সেটাও তারা দেখতে চান। নিচে তাদের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি রাখা হল উক্তির মধ্যে —
West Bengal Junior Doctors’ Front
Press release, 17/09/2024
আজ আমাদের আন্দোলন ৩৯ দিন পেরিয়েছে। আমাদের আন্দোলন আর পাঁচদফা দাবির স্বচ্ছতা এই দীর্ঘ সময়ে বহু অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা, বিচার নয় চেয়ার চাওয়ার মিথ্যে অভিযোগ, ইমেল, অডিওক্লিপ দিয়ে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ও আমাদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে বারবার। গতকাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমাদের সুদীর্ঘ আলোচনায় পাঁচদফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তার আংশিক কয়েকটি পূরণও হয়েছে। আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছি অভয়ার ন্যায়বিচারের পথে যে বাধাগুলি ক্রমাগত এসেছে এবং যার জন্য justice আসতে এতটা দেরী হচ্ছে, ঠিক সেই কারণেই আমরা CP, DCP North, DCP Central, PS(H), DHS, DME, এই ছয়জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি রেখেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করে কলকাতার নগরপাল, DC north, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে রাজ্য প্রশাসন তাদের পদ থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছেন, এটিকে আংশিক হলেও আমাদের আন্দোলনের জয় হিসেবেই আমরা দেখছি। কিন্তু প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির অপসারণের প্রসঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত এই মিটিংয়ে নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সদর্থক মৌখিক আশ্বাস দিলেও এ সম্মন্ধে কোনো পদক্ষেপ আমরা এখনো দেখতে পাইনি।
সুরক্ষা বিষয়ে রাজ্যের সমস্ত পদক্ষেপ আজকে সুপ্রিমকোর্টেও ভর্ৎসিত হয়েছে। রাজ্যসরকারের “অপরাজিতা আইন”-এর আড়ালে যে নারীবিদ্বেষ ও মধ্যযুগীয় মানসিকতা লুকিয়ে রয়েছে তা আজ সুপ্রিমকোর্টের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে। রাতে ডিউটি না দিয়ে, দিনে বারো ঘণ্টার কম ডিউটি দিয়ে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে যে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় তা রাজ্যের কৌঁসুলি কপিল সিব্বলও বলতে বাধ্য হয়েছেন এবং এই বিধান দু’টি সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। রাজ্যের সুরক্ষা সম্মন্ধে দ্বিতীয় পদক্ষেপ, অর্থাৎ সাতদিনের ট্রেনিংয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা নিয়েও আমাদের প্রবল আপত্তি রয়েছে এবং সুপ্রিমকোর্টেও ঠিকা কর্মচারী দিয়ে জোরাতালি দেওয়া এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা যে একেবারেই উপযুক্ত নয় তা স্পষ্ট হয়েছে এবং যেই ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা শুনিয়ে হাসপাতালে নিরাপত্তার যুক্তি খাড়া কড়া হচ্ছে তারও কোন খতিয়ান রাজ্য দিতে পারেনি।
আমরা আমাদের ৪ নম্বর দাবিতে আগেই বলেছিলাম, রোগীস্বার্থ তথা স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত না করা গেলে শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাড়িয়ে হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় রেফারাল ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, যথাযথ সংখ্যাতে নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-জিডিএ নিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীনিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী কর্মীনিয়োগ,সমস্ত সিঙ্গল প্রিক ব্যবস্থা চালু করা, পেশেন্ট কাউন্সিলিং এর সময় প্রফেশনাল কাউন্সিলর নিয়োগ করা সহ একগুচ্ছ দাবী করেছিলাম। হাসপাতালগুলিতে বেড নিয়ে দুর্নীতি , জীবনদায়ী ওষুধ পাওয়ার সমস্যা, সাধারণ মানুষকে নিত্যদিন এগুলির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা সুরাহা চাই এই সমস্ত সমস্যার। নিরাপত্তা সহ এই সমস্ত দাবীগুলিকে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল/মেডিকাল কলেজগুলিতে লাগু করার জন্য আমরা কলেজ ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও দাবী জানিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। অথচ এ বিষয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে শুধুমাত্র একটি রাজ্যস্তরের টাস্ক ফোর্স গঠনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি। কী করে এই দাবীগুলি পূরণ হবে, কী ভাবে টাস্ক ফোর্স মেডিকাল কলেজ/হাসপাতালগুলির স্তরে প্রয়োজনীয় রদবদল ঘটাবে, তা এখনো আমাদের কাছে অস্পষ্ট৷ আমরা চাই, অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজ্য ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করার নোটিশ জারী করা হোক, এবং তার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি মেডিকাল কলেজ/হাসপাতাল স্তরে কলেজ ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করা হোক জুনিয়র ডাক্তারদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সহ৷
আমাদের ৫ নাম্বার দাবীতে আমরা উল্লেখ করেছিলাম কলেজে কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করে ছাত্রছাত্রী ইউনিয়ন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং মেডিকাল কলেজ/হাসপাতালের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক বডিগুলিতে নির্বাচিত ছাত্রছাত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবস্থান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মৌখিক ভাবে রোগীকল্যাণ সমিতিগুলিকে ভেঙ্গে দেওয়ার ঘোষণা করলেও বাস্তবত কোনো লিখিত নোটিশ আমরা পাইনি, কীভাবে নতুন করে এই সমিতিগুলোকে গঠন করা হবে, তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। আমরা প্রতিটি মেডিকাল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আইনী স্বীকৃতিও এখনো পাইনি। আমরা দ্রুত এই দাবীগুলো পূরণের দাবী জানাচ্ছি।
আমরা চাইছি দ্রুত রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের উপরোল্লিখিত দাবীগুলিকে পূরণ করুক। আমরা কাজে ফিরতে চাই, আমরা চাই এই অচলাবস্থা দ্রুত কাটুক।