কাস্ট সেনসাস (১): ফিরে দেখা ১৯৩১ সালের জাতভিত্তিক জনগণনা

আমাদের দেশে শেষ জাতভিত্তিক জনগণনা হয় ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের শাসকবর্গের নিয়ন্ত্রাধীনে। সেই সময়ই জাতভিত্তিক জনগণনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা শুরু হয়েছিল। সেই জাতভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট (১৯৩৩) থেকে জানা যায়, সেই বিরোধিতার আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, জাতভিত্তিক জনগণনা জাত-কে আরো প্রোথিত করবে সমাজে। কিন্তু রিপোর্টে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল, এর কারণ সম্ভবতঃ রাজনৈতিক এবং জাত-কে তুলে দেওয়ার কথা বললেও আসলে অন্য উদ্দেশ্য কাজ করেছিল। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছিল, হিন্দুদের মধ্যে কিছু জাত নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাতে চায় নিজেদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য।

“নতুন’ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশের নিশ্চয়তা চায় মানুষ’

প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড় করানো। সংবিধানসহ রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক জায়গাগুলোতে গণতান্ত্রিক ধরনের সংস্কার করা। সামনে যেন হাসিনার মতো ভয়াবহ কিছুর মোকাবিলা না করতে হয়, ফ্যাসিজমের জন্ম না হয়, তা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কারের ভেতর দিয়ে নিশ্চিত করা। আদালতকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া, প্রেসকে প্রেসের মতো কাজ করতে দেওয়া। সামগ্রিক একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ। যেটা নিশ্চিত হলে আর্থিক অনেক ব্যাপার এমনিতেই সমাধান হয়ে যায়।

আরজিকর সংলাপ (৫) : অনেক অর্জন — স্বল্পমেয়াদী-দীর্ঘমেয়াদী; কিছু ধারাবাহিকতায়, কিছু নতুন

এই আন্দোলনে মেয়েদের স্বর বেশি কাঁপিয়েছে সমাজকে। কিন্তু মেয়েরা অসংগঠিত। জুনিয়র ডাক্তারদের মতো নয়। এখানে মেয়েদের কোনো স্বাধীন সংগঠন, স্বতন্ত্র আন্দোলন নেই। যতটুকু যা আছে, তা বিভিন্ন অন্যান্য সংগঠনের নারী শাখা। ফলে তারা স্বাধীন নয়। বলা যায়, এই প্রথম মেয়েদের স্বাধীন স্বতন্ত্র স্বর তৈরি হচ্ছে। ২০১৪ হোক কলরব আন্দোলনে ছাত্রীদের থেকে যে স্বর উঠেছিল, সেই স্বর এই আন্দোলনের প্রাথমিক শক্তি। কিন্তু এই আন্দোলনে যে মেয়েরা সামনে এগিয়ে এসেছে, তারা মূলতঃ ছাত্রী নয় — কমবয়সী চাকুরিরতা/রোজগেরে মেয়ে, যারা হয় সংসারের পাকেচক্রে এখনও ঢোকেনি, বা ঢুকেও ‘হারিয়ে’ যায়নি, বা ঢুকে পড়ে আবার বেরিয়ে এসেছে। এরা চিন্তায়, অর্থনীতিতে, চলাফেরায় অনেক স্বাধীন। বলা ভালো, এই প্রথম স্বাধীন স্বাবলম্বী মেয়েরা মুভমেন্ট করছে। আশা করা যায়, এই ঘটনা মেয়েদের আরো অনেক স্বাধীন উদ্যোগের জন্ম দেবে।

‘জাস্টিস-ফর-আরজিকর’ জনজাগরণের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (৪)

জুনিয়র ডাক্তাররা সরকারের প্রাত্যাহিক কাজকর্মের লাইভ স্ট্রিমিং চাননি। তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে বৈঠক হবে, তার লাইভ স্ট্রিমিং চেয়েছেন। কারণ, সাধারণতঃ দেখা যায়, এইরকম মিটিং শেষে সরকারের প্রতিনিধিরা বলে দেন, আলোচনা সদর্থক হয়েছে, সব মিটে গেছে।… যে সমস্ত প্রতিনিধিরা ভেতরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করতে গেলেন, তারা সেখানে কী বললেন, সেই নিয়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সরকারের তরফ থেকেও চেষ্টা থাকে, ভেতরে কি কথা হয়েছে তা নিয়ে মিথ্যে কথা প্রচার করে আন্দোলনকারী এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করতে। অনেক সময় প্রতিনিধিদের কিনেও নেয় সরকার। ফলে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক আজকের প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে লাইভস্ট্রিমিং করার দাবি মোটেও অন্যায্য নয়।

‘জাস্টিস-ফর-আরজিকর’ জনজাগরণের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (৩)

আন্দোলনে মেয়েদের স্বর এই মর্মান্তিক ঘটনাটিকে প্রাথমিকভাবে যৌনহিংসা হিসেবে দেখে। জুনিয়র ডাক্তারদের স্বর এটিকে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষমতাসীনদের তরফে দমন ও প্রতিশোধমূলক হিংসা হিসেবে দেখে। জাস্টিসের দাবির ভিন্ন অর্থ এই দেখার ভিন্নতা থেকে উঠে আসা। তবে, সরকার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা — এই বিষয়ে তারা এক জায়গায়। সর্বোপরি একটা তীব্র আবেগ এই দুই স্বর-কে মিলিয়ে দেয় — “অভয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই”।

আরজিকর জনজাগরণের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (২)

আধুনিক বিচারপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দু’টি ধাপ হল দু’টি প্রাথমিক ধাপ। অপরাধ নথিভুক্তিকরণ বা এফআইআর দাখিল করা। এবং প্রাথমিক তদন্তে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও অপরাধীকে আটক করা। যদি এফআইআর দাখিল করা না হয়, তাহলে বিচারের পথে এক চুলও এগোনো হলো না। তখন রাষ্ট্র ন্যায়বিচারের প্রাথমিক দায়িত্বটুকুও অস্বীকার করল। নারী এবং ভিন্নলিঙ্গের মানুষদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্য নির্যাতন -এর ক্ষেত্রে ন্যুনতম এফআইআর দাখিল করানোই কষ্টকর হয়।

আরজিকর-এর মর্মন্তুদ ঘটনা ও তারপর বাংলা জুড়ে অভূতপূর্ব চলমান প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (১)

তবে সমাজের পিতৃতান্ত্রিক অভ্যেস বদলানোর জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়; তার জন্য লাগাতার মেয়েদের দিক থেকে দেখা, বিশ্লেষণ করা, মেয়েদের নেতৃত্বে সমাজরাজনৈতিক প্রচার আন্দোলন সংগঠন, ও সর্বোপরি উন্নয়ন ও ক্ষমতার সমস্ত ক্ষেত্রে মেয়েদের ছেলেদের সমান অংশীদারি বা সমতা ছাড়া সমাজের দীর্ঘলালিত পিতৃতান্ত্রিক অভ্যেস পরিবর্তন অসম্ভব। রাত-দখল একে সজোরে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দিয়েছে, সেই ধাক্কাকে ছোটো ছোটো ঢেউ-এর মতো করে সমাজের মধ্যে রেখে যাওয়ার কাজ সামনে।

ওয়েনাড় বিপর্যয় অসমতাকে বেআব্রু করেছে : মাধব গ্যাডগিল

আমাদের প্রতিবেদনের থিম ছিল যে ভারত সহ যে কোনও দেশকে চারটি মূলধনের স্টক হিসাবে দেখা যেতে পারে, যথা, প্রাকৃতিক (জল, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, কৃষি, পশুপালন, মাছ উৎপাদন), সামাজিক (সহযোগিতামূলক আচরণ, নিরাপত্তা বোধ) , মানব (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান) এবং মানবসৃষ্ট মূলধন। ভারত একচেটিয়াভাবে প্রাকৃতিক, মানবিক এবং সামাজিক মূলধনের বিনিময়ে উচ্চ ভর্তুকিতে মানবসৃষ্ট মূলধন গড়ে তোলার দিকে মন দিয়েছে।

ধনীতম ০.১ শতাংশ-র সম্পত্তির আংশিক পুনর্বন্টন : কীভাবে সম্ভব এবং তা করা হলে কী কী হতে পারে?

না, সম্পত্তি পুনর্বন্টনের জন্য সচ্ছল মধ্যবিত্ত তো নয়ই, এমনকি ধনীদের (দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ধনীতর ১% ব্যক্তি, কিন্তু যারা অতিধনী বা ভীষণ-ধনী বা বেশ-ধনী নয়) সম্পত্তিতেও হাত দেওয়ার দরকারই নেই। শুধু অতিধনী, ভীষণ-ধনী ও বেশ-ধনীদের সম্পত্তির যথাক্রমে অর্ধেক, সিকিভাগ ও দশমাংশ আদায় করলেই দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের জন্য নিঃশুল্ক পুষ্টি, পাকা বাসা, স্কুল শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ, গণপরিবহন, এবং টেলিযোগাযোগ — এগুলি সম্ভব।

সর্বজনীন বিদ্যুৎ পরিষেবা: সাধারণ নির্বাচনে যে ইস্যুটা নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না

প্রায় নব্বই শতাংশ নিম্নতর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী পরিবারের গড় সর্বোচ্চ ব্যবহার্য বিদ্যুৎ ইউনিট নিঃশুল্ক; এবং সেই বিদ্যুৎ হতে হবে গ্রিড-এর তিন ফেজ-এর বা উচ্চমানের বিদ্যুৎ, ও লোডশেডিং বিহীন — এটাই হল সর্বজনীন বিদ্যুৎ পরিষেবা।