আরজিকর সংলাপ (৫) : অনেক অর্জন — স্বল্পমেয়াদী-দীর্ঘমেয়াদী; কিছু ধারাবাহিকতায়, কিছু নতুন

এই আন্দোলনে মেয়েদের স্বর বেশি কাঁপিয়েছে সমাজকে। কিন্তু মেয়েরা অসংগঠিত। জুনিয়র ডাক্তারদের মতো নয়। এখানে মেয়েদের কোনো স্বাধীন সংগঠন, স্বতন্ত্র আন্দোলন নেই। যতটুকু যা আছে, তা বিভিন্ন অন্যান্য সংগঠনের নারী শাখা। ফলে তারা স্বাধীন নয়। বলা যায়, এই প্রথম মেয়েদের স্বাধীন স্বতন্ত্র স্বর তৈরি হচ্ছে। ২০১৪ হোক কলরব আন্দোলনে ছাত্রীদের থেকে যে স্বর উঠেছিল, সেই স্বর এই আন্দোলনের প্রাথমিক শক্তি। কিন্তু এই আন্দোলনে যে মেয়েরা সামনে এগিয়ে এসেছে, তারা মূলতঃ ছাত্রী নয় — কমবয়সী চাকুরিরতা/রোজগেরে মেয়ে, যারা হয় সংসারের পাকেচক্রে এখনও ঢোকেনি, বা ঢুকেও ‘হারিয়ে’ যায়নি, বা ঢুকে পড়ে আবার বেরিয়ে এসেছে। এরা চিন্তায়, অর্থনীতিতে, চলাফেরায় অনেক স্বাধীন। বলা ভালো, এই প্রথম স্বাধীন স্বাবলম্বী মেয়েরা মুভমেন্ট করছে। আশা করা যায়, এই ঘটনা মেয়েদের আরো অনেক স্বাধীন উদ্যোগের জন্ম দেবে।

‘জাস্টিস-ফর-আরজিকর’ জনজাগরণের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (৪)

জুনিয়র ডাক্তাররা সরকারের প্রাত্যাহিক কাজকর্মের লাইভ স্ট্রিমিং চাননি। তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে বৈঠক হবে, তার লাইভ স্ট্রিমিং চেয়েছেন। কারণ, সাধারণতঃ দেখা যায়, এইরকম মিটিং শেষে সরকারের প্রতিনিধিরা বলে দেন, আলোচনা সদর্থক হয়েছে, সব মিটে গেছে।… যে সমস্ত প্রতিনিধিরা ভেতরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করতে গেলেন, তারা সেখানে কী বললেন, সেই নিয়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সরকারের তরফ থেকেও চেষ্টা থাকে, ভেতরে কি কথা হয়েছে তা নিয়ে মিথ্যে কথা প্রচার করে আন্দোলনকারী এবং তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করতে। অনেক সময় প্রতিনিধিদের কিনেও নেয় সরকার। ফলে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক আজকের প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে লাইভস্ট্রিমিং করার দাবি মোটেও অন্যায্য নয়।

আরজিকর জনজাগরণের প্রেক্ষাপটে নানা সংলাপ (২)

আধুনিক বিচারপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দু’টি ধাপ হল দু’টি প্রাথমিক ধাপ। অপরাধ নথিভুক্তিকরণ বা এফআইআর দাখিল করা। এবং প্রাথমিক তদন্তে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও অপরাধীকে আটক করা। যদি এফআইআর দাখিল করা না হয়, তাহলে বিচারের পথে এক চুলও এগোনো হলো না। তখন রাষ্ট্র ন্যায়বিচারের প্রাথমিক দায়িত্বটুকুও অস্বীকার করল। নারী এবং ভিন্নলিঙ্গের মানুষদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতন এবং অন্যান্য নির্যাতন -এর ক্ষেত্রে ন্যুনতম এফআইআর দাখিল করানোই কষ্টকর হয়।

সর্বজনীন বিদ্যুৎ পরিষেবা: সাধারণ নির্বাচনে যে ইস্যুটা নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না

প্রায় নব্বই শতাংশ নিম্নতর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী পরিবারের গড় সর্বোচ্চ ব্যবহার্য বিদ্যুৎ ইউনিট নিঃশুল্ক; এবং সেই বিদ্যুৎ হতে হবে গ্রিড-এর তিন ফেজ-এর বা উচ্চমানের বিদ্যুৎ, ও লোডশেডিং বিহীন — এটাই হল সর্বজনীন বিদ্যুৎ পরিষেবা।

সংযোজিত নাগরিকত্ব বিধি (CAR 2024) : কিছু বিপজ্জনক শর্ত

এমনিতেই CAA 2019 এবং CAR 2024 দুটিই খুবই বিতর্কিত দুটি আইন, কারণ এই দুটিতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হচ্ছে; যা আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে আদৌ সংবিধানসম্মত কি না তা ভাবার মতো। এখনও বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।

কিন্তু সেসব নৈতিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রেক্ষিত বাদ দিলেও, যাদের কথা ভেবে এই আইন ও বিধি বানানো, আদৌ তারা উপকৃত হবে কি না এই বিধির বল-এ; নাকি ভোটের মুখে তাদের শান্ত করার জন্য তাদের জন্য নতুন কোনও বিপদ হাজির করানো হল — সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

শাসক নির্বাচনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি : একটি ফ্যাসিবাদী প্রবণতা

শাসক নির্বাচনের দায় আমি নিচ্ছি না। আমি তাকে ভোট দেব, আবার সে-ই আমার ভোটে জিতে এসে আমার ওপর ছড়ি ঘোরাবে, আমার গ্যাসের দাম বাড়াবে, আমার ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা আটকে দেবে, চাকরি পার্মানেন্ট করার দাবিতে অবস্থান করতে গেলে আমার ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেবে, আমার পড়াশুনার খরচ বাড়িয়ে দেবে, আমার যাতায়াতের খরচ বাড়িয়ে দেবে। অথবা এমএলএ এমপি হয়ে যাবার পর যে পার্টি বেশি রেট দিচ্ছে তার দিকে চলে যাবে। তখন আমার অপরাধবোধ হবে। ভাবব, ঈসসসস! কী মরতে যে এদের/একে ভোট দিয়েছিলাম। তার চেয়ে যে/যারা হারবে নিশ্চিত, তাদের ভোট দেব। আপনি আপনার কাজ করুন। আমায় আমার কাজ করতে দিন। রাজনীতি দশজনকে নিয়ে। ভোট দেওয়া ব্যক্তিগত ব্যাপার।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ বিষয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর

২০২০ জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি ই-প্যাম্পলেট (ক্যা-এনআরসি ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্র রুখে দিন) থেকে নেওয়া। আপনি কি উদ্বাস্তু? ‘এনআরসি’ হবে, যত পুরনো ডকুমেন্ট লাগবে, আর একাত্তরের আগের ডকুমেন্ট না দেখাতে পারলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে — এইরকম শুনছেন এদিক ওদিক, নেতাদের বক্তৃতায়? আরও শুনেছেন, শুধু যারা হিন্দু তারা ছাড় পাবে মোদি-অমিতশাহের আনা নতুন ‘নাগরিকত্ব সংশোধন’ (ক্যা) আইনে? […]

একটি সমতার ইস্তাহারের খসড়া ও তার ওপর দশটি প্রশ্নোত্তর

একটি সমতার ইস্তাহারের খসড়া প্রকাশিত হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগে। তা পড়ে নানা প্রশ্ন করেন অনেকে। তার মধ্যে থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করা হল। এই প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে সমতার ইস্তাহারের ধারনা আমাদের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে একটু একটু। একইসাথে পাঠকদের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে আশা করা যায়। প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়ে দেবার মানে এই নয় যে প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ নয় বা প্রশ্নগুলি সমাধিত হয়ে গেল। এটা তো কোনো তর্কযুদ্ধ নয় এবং জেতা-হারারও ব্যাপার নয়। উত্তরগুলির মতো, প্রশ্নগুলিও গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী। আরো প্রশ্ন ও উত্তর চলতে চলতে তৈরি হবে আশা করা যায়।

বিজেপির কারণ (৩) : স্বজাতের বাসনা

আত্মপরিচয়ের রাজনীতি বিদ্বেষের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে কানাগলি, কিন্তু আত্মপরিচয়ের রাজনীতি অপরের প্রতি আত্মীয়তা ও সহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপটেও হতে পারে। এই প্রেক্ষাপট নির্মাণে সবচেয়ে সাহায্য করতে পারে ইকুইটি বা সার্বিক সমতার ধারনা।