আরজিকর এর মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে রাত-দখল এবং অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছে কলকাতা তথা বাংলা তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা ভেতরে-বাইরে সংলাপ চালাচ্ছিলাম। সেই সংলাপের শেষ কিস্তি এটা। তবে এই সংলাপ আরো নানা লেখার মধ্যে দিয়ে চলবে। সঙ্গের ছবি — মুখ্যমন্ত্রী এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদলের ১৪ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের ভেস্তে যাওয়ার মুহুর্তের, এবং ১৫ সেপ্টেম্বর বিশাল মিছিলের। প্রসঙ্গতঃ আগে একদিন বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, ‘ওরা বিচার চায় না, চেয়ার চায়’। পরদিন থেকে স্লোগান ওঠে, ‘রাখো তুমি তোমার চেয়ার, আমরা চাই ন্যায়বিচার’।
??=>জুনিয়র ডাক্তারদের জাস্টিস আন্দোলন শেষমেশ কী দাঁড়ালো? জাস্টিস কি পাওয়া গেল?
@@=> সরকারের সঙ্গে বৈঠক হবার একদিন পরে মুখ্যসচিব স্বাস্থ্যসচিবকে একটা দশ দফা নির্দেশ দেয়, তাতে আন্দোলনের বাকি প্রায় সব দাবি মেনে নেওয়া হয় — যেমন, সরকারি হাসপাতালে কত বেড ফাঁকা তা কেন্দ্রীয়ভাবে হিসেব রাখা, কেন্দ্রীয়ভাবে রেফারেল সিস্টেম চালু করা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার, টেকনিশিয়ান, নার্স নিয়োগ ইত্যাদি। এই নির্দেশ এর কথা জানার পরেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ও স্বাস্থ্যভবনের সামনের অবস্থান উঠে যায়। নিচে কর্মবিরতি তোলার পরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল —


??=> আচ্ছা। আর মেয়েদের জাস্টিস আন্দোলনের কী দাঁড়ালো?
@@=> এই আন্দোলনে মেয়েদের স্বর বেশি কাঁপিয়েছে সমাজকে। কিন্তু মেয়েরা অসংগঠিত। জুনিয়র ডাক্তারদের মতো নয়। এখানে মেয়েদের কোনো স্বাধীন সংগঠন, স্বতন্ত্র আন্দোলন নেই। যতটুকু যা আছে, তা বিভিন্ন অন্যান্য সংগঠনের নারী শাখা। ফলে তারা স্বাধীন নয়। বলা যায়, এই প্রথম মেয়েদের স্বাধীন স্বতন্ত্র স্বর তৈরি হচ্ছে। ২০১৪ হোক কলরব আন্দোলনে ছাত্রীদের থেকে যে স্বর উঠেছিল, সেই স্বর এই আন্দোলনের প্রাথমিক শক্তি। কিন্তু এই আন্দোলনে যে মেয়েরা সামনে এগিয়ে এসেছে, তারা মূলতঃ ছাত্রী নয় — কমবয়সী চাকুরিরতা/রোজগেরে মেয়ে। যারা হয় সংসারের পাকেচক্রে এখনও ঢোকেনি, বা ঢুকেও ‘হারিয়ে’ যায়নি, বা ঢুকে পড়ে আবার বেরিয়ে এসেছে। এরা চিন্তায়, অর্থনীতিতে, চলাফেরায় অনেক স্বাধীন। বলা ভালো, এই প্রথম স্বাধীন স্বাবলম্বী মেয়েরা মুভমেন্ট করছে। আশা করা যায়, এই ঘটনা মেয়েদের আরো অনেক স্বাধীন উদ্যোগের জন্ম দেবে।
২০১৪ হোক-কলরব আন্দোলনের শুরু হয়েছিল কীভাবে? একটি অন্য কলেজের মেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ফেস্ট (বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব) দেখতে এসে ইউনিভার্সিটির ফেস্ট-সংগঠক কিছু ছাত্রের হাতে গণ-শ্লীলতাহানির শিকার হয় (এটাই ছিল অভিযোগ)। তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির ইংরেজি, কম্পারেটিভ লিটারেচার সহ আরো কিছু ডিপার্টমেন্টের মূলতঃ ছাত্রীরা (যাদের কেউ কেউ মেয়েটির বন্ধু ছিল) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিকভবনে সারারাত্রিব্যাপী অবস্থান শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই আন্দোলন কার্যত কর্তৃপক্ষ বিরোধিতায় চলে যায় (যার শেষ হয় উপাচার্যের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে), কিন্তু হোক কলরব শব্দটার মধ্যে থেকে যায় সূচনাটার কথা।
ছাত্র আন্দোলনে মেয়েদের ইস্যু যে গুরুত্বপূর্ণ, এবং মেয়েদের ইস্যু যে অবহেলিত — এটা প্রথম তুলে ধরেছিল হোক কলরব আন্দোলন — প্রথমে যা ছিল একেবারেই মেয়েদের আন্দোলন। যেমন, বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টে ছাত্রীদের শৌচাগার ছিল না বা সংখ্যায় অপ্রতুল ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা এই আন্দোলনের পর থেকে পরিবর্তন হয়। কিন্তু পরে কর্তৃপক্ষের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে চলে যাওয়ার ফলে আন্দোলন মেয়েদের দিক থেকে আর এগোয়নি। পরে সেই আন্দোলনের রেশ টেনে অনেকগুলি ‘মিটু’ ইত্যাদির ঘটনা ঘটে। কিন্তু মেয়েদের স্বতন্ত্র আন্দোলন স্বাধীন সংগঠন গড়ে ওঠেনি। পক্ষান্তরে এবারের রাত-দখল মেয়েদের নেতৃত্বে মেয়েদের ব্যাপারে, আন্দোলন চলাকালীন সংগঠনও মেয়েদের। উদাহরন স্বরূপ ১৪ আগস্ট রাত দখলের অন্যতম কেন্দ্র যাদবপুর এইটবি -র সংগঠকদের ডিক্লারেশন —
রিক্লেইম দ্য নাইট যাদবপুর , যারা যাদবপুরে আসবেন তাদের জন্য 👇 ১৪ আগস্ট। রাত ১১টা থেকে জমায়েত স্থান: যাদবপুর এইট বি (কেউ যদি আগে চলে আসেন নীচের নম্বরগুলোয় যোগাযোগ করুন)। আমরা মহিলা ও প্রান্তিক যৌন-লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের কালকের জমায়েতে প্রধাণ স্টেক-হোল্ডার সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী হিসাবে স্বাগত জানাই। পুরুষদের সহযোদ্ধা ও দর্শক হিসাবে স্বাগত জানাই। কোনো সেলিব্রিটি মানুষ যদি আসতে চান তাঁদের সাধারণ আন্দোলনকারী হিসাবে যোগ দিতে স্বাগত জানাই। কোনো রাজনৈতিক দলের বর্তমান ও প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছিনা। প্রকাশ্য নারী-বিদ্বেষী কোনো শক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছিনা। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যেকোনো রঙের পতাকা নিয়ে আসুন। কোনো দলের পতাকা, ব্যানার আনবেননা। গাড়ি চলাচল শুরু না হওয়া অবদি আমরা থাকব যাতে কারো বাড়ি পৌঁছাতে অসুবিধা না হয়। জমায়েতে বয়স্ক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বসার জায়গা থাকছে। বাকীরা সতরঞ্চিতে বসব। হ্যান্ড মাইক থাকবে। মাথার উপর ছাউনি থাকছে। মেডিক্যাল কিট থাকছে। এছাড়াও নিজের প্রয়োজনীয় অসুধ সাথে নিয়ে আসুন। স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্যারি করুন, আমরা সীমিত ব্যবস্থা রাখব। সুলভ টয়লেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনো কনফার্মেশন পাইনি। বিভিন্ন চেষ্টা চলছে। আপনাদের জানানো হবে। জলের ব্যবস্থা থাকছে। প্লাস্টিক বর্জন করার জন্য নিজেরা বোতল ক্যারি করুন, জল ভরে নেবেন। ফ্লাস্কে চা ভরে আনুন। শুকনো খাবার সাথে রাখুন। আশেপাশে ২/৩টি চায়ের দোকান খোলা থাকছে। সবাই নিজেরা চা ইত্যাদি খেয়ে নিজের দায়িত্বে দাম মেটাবেন। বক্তব্য/নাচ/গান/আবৃতি/পথ নাটিকা/একক নাট্য উপস্থাপনা/ওয়াল ও স্ট্রিট গ্রাফিটি বানানো/জমায়েতে পোস্টার লেখা ও আর্টওয়ার্ক এই এক্টিভিটিগুলি থাকছে। যদি আপনি কোনো এক্টিভিটিতে যোগ দিতে ইচ্ছ্যুক হন তবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তুলি, পোস্টার, রঙ নিয়ে আসুন। আমাদের কাছে সীমিত পরিমাণ থাকবে। জমায়েতে কেউ যদি কোনো পারফর্মেন্স করতে চান, নীচের তালিকায় নিজের নাম ও পছন্দের ফর্ম উল্লেখ করুন, যাতে আমাদের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। জমায়েত স্থলে আসতে বা জমায়েত স্থলের মধ্যে কোনো সাহায্যের দরকার পড়লে নীচের নম্বরে যোগাযোগ করুন।
??=> তো এই আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি অর্জনের (অ্যাচিভমেন্ট) জায়গা বলতে মেয়েদের স্বাধীন সংগঠনের সম্ভবনা। তাই তো?
@@=> এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্জন হতে পারে। তবে আরো কিছু দীর্ঘমেয়াদী অর্জনেরও সম্ভবনা থাকছে। যেমন, ‘থ্রেট কালচার’ বলে যেটাকে অভিহিত করা হচ্ছে — মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কর্তৃপক্ষ, শাসক দলের ঘনিষ্ট ছাত্র সংগঠনের সদস্য, এবং শাসক দলের ঘনিষ্ট শিক্ষকদের তরফে অন্যান্য ছাত্র, শিক্ষক, জুনিয়র ডাক্তার ইত্যাদিদের ভয় দেখিয়ে নানা দুর্নীতিতে সামিল করানো হত। এই ভয়গুলির মধ্যে ছিল পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় থেকে শুরু করে ট্রান্সফারের ভয়। প্রসঙ্গতঃ আরজিকর -এ ঘটনার দিন সামান্য কিছু সংখ্যক জুনিয়র ডাক্তার ও ছাত্রছাত্রী অভয়ার পক্ষে দাঁড়ায়, কিন্তু তাদের আরজিকর-এর ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ ভয় দেখায় এবং তারা কলেজে নিজেদের মধ্যে সেভাবে মিটিং-ও করতে পারেনি। বিকেলে মেডিক্যাল কলেজে এসে তারা নিজেদের মধ্যে মিটিং করে। এই হুমকি সংস্কৃতি যেভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে, কলেজে কলেজে এই হুমকি সংস্কৃতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা নেওয়া (কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল), তদন্ত ও শাস্তি (উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত হাসপাতাল ইত্যাদি) ঘটে চলেছে — তা আশা জাগায়, দীর্ঘমেয়াদে এই হুমকি সংস্কৃতির একটা হেস্তনেস্ত হতে চলেছে।
একই সাথে, বিপুল পরিমাণে কর্তৃপক্ষ-শিক্ষক-ছাত্র-জুনিয়র ডাক্তার-সিনিয়র ডাক্তার রা এই হুমকি সংস্কৃতির তদন্তের আওতায় আসার মধ্যে দিয়ে (যেমন, আরজিকরএ এখনও অবদি ৬৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে অভিযোগের ভিত্তিতে) গোটা ডাক্তারি শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ডাক্তারি শিক্ষাব্যবস্থা, পরীক্ষাব্যবস্থা সহ সরকারি হাসপাতালের পরিচালন ব্যবস্থাও বদল হতে পারে। এরই মধ্যে হাসপাতালের খরচাপাতি সহ পরিচালনার মূল জায়গাগুলো যে কমিটি দেখভাল করে, সেই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিধায়ক সাংসদ-দের বাদ দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া, জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট নামেও একটা সংগঠন তৈরি হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচন-ও সম্ভাব্য। আশা করা যায়, মেডিক্যাল কলেজগুলির এই পরিবর্তনের প্রভাব বাকি সমস্ত জায়গাতেও পড়বে।
উল্লেখ্য, এই থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতির মধ্যে পড়ছে র্যাগিং -ও। গত বছর আগস্ট মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের একজন ছাত্র (অপ্রাপ্তবয়স্ক) হোস্টেলে র্যাগিং এর শিকার হয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং মারা যায়। এই ঘটনা তোলপাড় করেছিল কলকাতা সহ সারা রাজ্যকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং প্রাক্তনীরা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘র্যাগিং সংস্কৃতি’র বিরোধিতায় আন্দোলন করে এবং সামগ্রিক আন্দোলনের চাপে ১২ জন ছাত্র সরাসরি র্যাগিং এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশি তদন্তের আওতায় আসে। তদন্তে POSCO আইনের ধারা যুক্ত হওয়ায় তারা জামিন পায়নি, পুলিশ অন্তিম চার্জশিট জমা দিয়েছে কিছুদিন হল। এছাড়া আরও সতেরো জন ছাত্র, গবেষক, এবং প্রাক্তনীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি নানা মাত্রার শাস্তির সুপারিশ করেছে।
কিন্তু গত বছরের এই র্যাগিং এবং তজ্জনিত মর্মান্তিক ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগের আওতায় আসেনি। শুধু হোস্টেল সুপারের অপসারন হয়েছে, কিন্তু ডীন, রেজিস্ট্রার এবং উপাচার্য- ইত্যাদিকে কোনও অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়নি। যদিও ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কেউ ছিল না সরকারি টালবাহানার কারণে; রেজিস্ট্রার ছুটিতে ছিলেন; ডীন ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ আগে হোস্টেল থেকে ছাত্রদের ফোন পেয়েও ঘটনাস্থলে হাজির হননি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। তা ওই আন্দোলনের একটি সীমাবদ্ধতা ছিল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং-বিরোধী আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিক র্যাগিং-কে প্রশ্ন করতে পারেনি, হয়ত তার অবকাশও ছিল না; একইসাথে অন্তঃছাত্র র্যাগিং-এর ক্ষেত্রে (সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন) কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেও নিশানা করতে পারেনি। শুধু অভিযুক্ত ছাত্রদের শাস্তি চাইতে পেরেছে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির দীর্ঘকাল নির্বাচন না হওয়া ইউনিয়নের নেতৃত্বদায়ী সংগঠন-কে (শাসক দলের ছাত্র সংগঠন নয়) নিশানা করতে পেরেছে। আরজিকর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে হুমকি সংস্কৃতির বিরোধীতা এসেছে, তা একইসাথে কর্তৃপক্ষীয় র্যাগিং-কেও প্রশ্ন করতে পেরেছে।
এছাড়া, সাধারণভাবে এই মহতী আন্দোলন সমাজে প্রতিবাদের গুরুত্ব ও মেয়েদের স্বাধীনতার গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
??=> আগের এত আন্দোলনের সূত্র টানা হচ্ছে, দশ বছর আগের হোক-কলরব বা গত বছরের অ্যান্টি-র্যাগিং, কিন্তু ২০১৯ সালে এনআরএস হাসপাতালে পরিবহ নামে একজন ইন্টার্ন/জুনিয়র ডাক্তার-কে পেশেন্ট পার্টি-র কিছু লোক মেরে মাথা ফাটিয়ে দেবার পর যে আন্দোলন হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের, তার কথা তো বলছেন না?
@@=> সেই আন্দোলনেরও নির্ধারক প্রভাব আছে এবারের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে। পরিবহ-র ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ছিল দীর্ঘদিন পর হওয়া জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের বড়ো আন্দোলন। সেই আন্দোলনের সময় যারা প্রথম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বা ছাত্রী ছিলেন, তারা অনেকেই এখন জুনিয়র ডাক্তার। সেই আন্দোলন প্রথম দেখিয়ে দিয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার এবং ইন্টার্নরা সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল। আন্দোলনের তীব্রতার কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে লাইভস্ট্রিমিং-এ মিটিং করে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির ফয়শালা করতে হয়। উল্লেখ্য, এবারেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের লাইভস্ট্রিমিং এর দাবি উঠেছিল ডাক্তারদের তরফে এবং এই টানাপোড়েনে দুইবার বৈঠক ভেস্তে যায়। কিন্তু এটা উল্লেখ করার মতো বিষয়, এনআরএস আন্দোলনের পর জুনিয়র ডাক্তারদের কোনও ফ্রন্ট গড়ে ওঠেনি; কিন্তু এবারে আরজিকর আন্দোলন চলাকালীন মাঝপথে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট তৈরি হয়, যা এই আন্দোলনে অন্যতম তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বদায়ী সংগঠন। তাছাড়া, এনআরএস -এর আন্দোলনে শুধু ডাক্তারদের নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছিল; তাদের নিরাপত্তার জন্য যে পেশেন্টদের হয়রানি কমানোর ব্যবস্থাগত সমাধান প্রয়োজন, একথা সেভাবে ওঠেনি। কিন্তু এবারে সেই কথা জোরতারভাবে উঠেছে।
??=> ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’ আন্দোলন কি তাহলে এবার থেমে যাওয়া উচিত?
@@=> ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’ আন্দোলন নিজে একটি চলমান প্রক্রিয়া, আবার একইসাথে সে আরো বৃহত্তর অর্থে মানুষের ন্যায্য সমাজের জন্য আন্দোলনের অংশ। এই আন্দোলনের যারা মূল কুশীলব, জুনিয়র ডাক্তার এবং মেয়েরা — তারা পেশাদার রাজনীতিক নন। তারা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে তাদের আন্দোলনে ছেদ পরাই স্বাভাবিক। এছাড়া যে ব্যাপক মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে, তাদেরও অবস্থা তথৈবচ। অপরদিকে যারা রাজনৈতিক সংগঠন করে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে, অথবা পেশাদার রাজনীতিক — তারা লাগাতার আন্দোলনে থাকতে পারে স্বাভাবিকভাবে। তবে আশা করা যায়, এই আন্দোলন মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দেবে সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলেই।
প্রসঙ্গেতঃ দিল্লির কৃষক আন্দোলন যে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান সফলভাবে করে উঠতে পেরেছিল, তার কারণ আন্দোলনকারী কৃষকদের অনুপস্থিতিতে তাদের জমিগুলিতে চাষ করছিল কৃষি-মজুররা। দেখভাল করার কাজটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করে দিচ্ছিল অবস্থানরত কৃষকরা।