মণিপুরের মিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে জাতিদাঙ্গার দিনগুলিতে — বলল এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট

বিশেষ প্রতিবেদন , ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মণিপুরের দুর্ভাগ্যজনক জাতিদাঙ্গায় মণিপুরের পরিচিত মিডিয়াগুলি একপক্ষ নিয়েছে — এইরকম রিপোর্ট করল এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া। এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধিদল মণিপুর ঘুরে এসে এই রিপোর্ট করে। রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হল — মণিপুরের মিডিয়াগুলির বেশিরভাগই মৈতেই জাতির মালিকানাধীন। এমনকি ৩-৪ মে ২০২৩ এ জাতিদাঙ্গা শুরু হবার পর উপত্যকার জনপ্রিয় টিভি নেটওয়র্কগুলির বেশিরভাগ-ই দৈনিক ইংরেজি সংবাদ বুলেটিনগুলি পাল্টে মৈতেইলন ভাষায় করে ফেলেছে। সবমিলিয়ে ৮ টি প্রিন্ট বা ওয়েব মিডিয়া এবং ৫টি টিভি মিডিয়া আছে উপত্যকায়। অপরপক্ষে পাহাড়ি জেলাগুলিতে কুকি-চিন-জো জনজাতির মালিকানাধীন কোনও দৈনিক প্রিন্ট মিডিয়া নেই। তিনটি টিভি নেটওয়র্ক আছে, যার একটি ইউটিউব চ্যানেল, আর বাকি দুটি দিনে একটি করে সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করে। পাহাড়ে জনপ্রিয় প্রিন্ট ও ওয়েবসাইট মিডিয়া উরখুল টাইমস নাগা জনজাতির মালিকানাধীন।

রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ মে থেকে মণিপুরে ইন্টারনেট নিষিদ্ধ হবার ফলে সংবাদ পরিবেশন আরও পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে। জাতিদাঙ্গা শুরু হবার পর থেকে রাজধানী ইম্ফলের মিডিয়াগুলি মৈতেই জাতির মিডিয়াতে পরিণত হয়েছে। রিপোর্টে ইম্ফলের একজন উদার মনোভাবাপন্ন বরিষ্ঠ সাংবাদিককে উদ্ধৃত করা হয়েছে যার সঙ্গে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদল কথা বলেছে, “… (৩ মে জাতিদাঙ্গা শুরু হবার পর) ইম্ফলের স্থানীয় মিডিয়া বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। (পাহাড়ি জেলা) চূড়াচাঁদপুরেও সম্ভবত একই পরিস্থিতি ছিল। ইম্ফলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে। চূড়াচাঁদপুর এবং মোরে জেলায় মৈতেই বসতিগুলিতে উন্মত্ত কুকি জনতার হামলার ছবি এই হিংসায় ইন্ধন জোগায়, কিন্তু তখনও তা সামান্য কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল এবং ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু (ইম্ফলে) উন্মত্ত জনতার হামলা ভয়াবহ আকার নেয় মে মাসের চার ও পাঁচ তারিখ। তার প্রতিক্রিয়ায় সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, প্রথমে মোবাইল ডেটা এবং পরে ব্রডব্যান্ড কেবল লাইন। …”

আরেকজন সম্পাদক-কে উদ্ধৃত করা হয় রিপোর্টে, “আমাদের দায়িত্ব ছিল মানুষকে খবর দেওয়া, কিন্তু ফোন এবং ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম জাতিহিংসার প্রথম দিকের দিনগুলিতে। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে বুঝতে পারা যাচ্ছিল না। গুজব আলাদা করা যাচ্ছিল না। ”

একজন সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে বলেন, “প্রথমদিকে ইম্ফলের বয়ানগুলি ছিল এরকম — দাঙ্গাটা শুরু করেছে আত্মসমর্পণ করা কুকি জঙ্গীরা যাদের সঙ্গে কেন্দ্র সরকার শান্তি-চুক্তি করেছে। তারপর তারা বলল, দাঙ্গার জন্য দায়ী মায়ানমার সীমান্ত জুড়ে কুকি এলাকায় ড্রাগ কার্টেলগুলি এবং আফিম-চাষিরা। তারপর হঠাৎ তারা বলতে শুরু করল, হিংসার জন্য দায়ী মায়ানমার থেকে বন্দুক নিয়ে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা যারা বনাঞ্চলগুলিতে বাসা বানাতে শুরু করেছে। তারপর তারা এর একটা নাম দিল — নার্কো-টেররিজম।”

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া-র এই রিপোর্ট জাতিহিংসায় উস্কানি দিচ্ছে, এই অভিযোগে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদলের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছে মণিপুর সরকার।

One thought on “মণিপুরের মিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে জাতিদাঙ্গার দিনগুলিতে — বলল এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট

  1. খুব ছোটো লেখায় অনেক বিষয় ধরা যায়নি। বড়ো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *