শমীক সরকার
একটি সমতার ইস্তাহারের খসড়া প্রকাশিত হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগে, এই ওয়েবসাইটেরই একটি লেখার শেষ অংশে। তা পড়ে নানা প্রশ্ন করেন অনেকে। তার মধ্যে থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করা হল। এই প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে সমতার ইস্তাহারের ধারনা আমাদের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে একটু একটু। একইসাথে পাঠকদের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে আশা করা যায়। প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়ে দেবার মানে এই নয় যে প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ নয় বা প্রশ্নগুলি সমাধিত হয়ে গেল। এটা তো কোনো তর্কযুদ্ধ নয় এবং জেতা-হারারও ব্যাপার নয়। উত্তরগুলির মতো, প্রশ্নগুলিও গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী। আরো প্রশ্ন ও উত্তর চলতে চলতে তৈরি হবে আশা করা যায়। বিঃদ্রঃ — আলোচনার সুবিধার্থে সমতার ইস্তাহারের খসড়াটি এই প্রশ্নোত্তরের নিচে অর্থাৎ পাতার শেষ দিকে আরেকবার দেওয়া হল।
প্রশ্ন ১ : মানুষকে তার নানা পরিচয়ে ভেঙে ফেলা কি ঠিক ?
উত্তর : সামাজিক মানুষ নানা পরিচয় দিয়েই পরিচিত হয়। বিশেষতঃ অচেনা ও সামনাসামনি দেখা না হওয়া মানুষের ক্ষেত্রে সেই পরিচয় একটা প্রাথমিক বোঝাপড়া হিসেবে কাজ করে। ফলতঃ অনেকটা এইভাবে বলা যায়, বৃহত্তর সমাজ কোনো ব্যক্তি মানুষকে যখন প্রাথমিকভাবে চেনে, তখন সে তাকে কোনো একটা সমাজের অন্তর্ভুক্ত বলে চেনে। সেইটাই তার পরিচয়। ব্যক্তি মানুষ অনেক সময় নিজেও চায় সেই পরিচয়ের আশ্রয়। আবার অনেক সময় চায় না। সামাজিক পরিচয় মানুষকে একটা বল-ভরসা দেয়। নিঃসন্দেহে, সামাজিক পরিচয় ব্যক্তিটির নিজস্বতাকে খর্ব করে। সামাজিক পরিচয়ের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ সাজতে হয়। এইজন্য আমরা পরিচয়ের বদলে আত্মপরিচয় শব্দটা ব্যবহার করছি। যাতে যার পরিচয়, সে পরিচয় গঠনে তার নিজের সম্মতিও থাকে অনেকটাই। উদাহরণ স্বরূপ, ধরা যাক, একজন বাঙালি এবং নারী — দুই পরিচয়ের মধ্যে সে নিজে নারী হিসেবে পরিচিত হতে বেশি চায়। সেক্ষেত্রে তার মূল আত্মপরিচয় — নারী। আবার আত্মপরিচয় শব্দটির মধ্যে সামাজিকভাবে স্বীকৃত পরিচয় ছাড়াও নিজে বানিয়ে নেওয়া পরিচয়ও ঢুকে যায়। যেমন, কেউ একজন পরিচিত হতে চায় সাইক্লিস্ট হিসেবে, বা অভিনেতা হিসেবে, বা কবি হিসেবে। এরকম। আবার আত্মপরিচয় বলেই, তা বদলেও যায় সময়ের সাথে সাথে।
আমরা সমতার ইস্তাহারে কিছু পরিচয়ের অক্ষের কথা বলেছি। যেমন, জাত-ধর্ম-ভাষা-লিঙ্গ-শ্রেণী-বর্ণ-জাতিসত্ত্বা-ভৌগলিক অবস্থান। নিঃসন্দেহে এর চেয়েও বেশি অক্ষ বাস্তবে আছে এবং বানানো আত্মপরিচয়ের অক্ষের কথা বলা হয়নি।
পরিচয়গুলির বেশিরভাগেরই জন্মগত কিছু সামাজিক শিকড় আছে। জন্মগত বলতে কোনো বায়োলজিক্যাল বা জৈব কিছুর কথা বলা হচ্ছে না। জন্মের পর থেকে আমরা শৈশব ও কৈশোরে যে সামাজিক পরিমণ্ডল পাই (যার মধ্যে পারিবারিক-ও অন্তর্ভুক্ত) তাতে আমাদের কোনো ভূমিকা থাকে না। একধরনের অসহায়তার মধ্যে এই সামাজিক পরিমণ্ডল আমাদের উষ্ণতা দেয়, বড়ো করে। আমরা সেই সামাজিক পরিমণ্ডলের বিচার করতে পারি না, বা পছন্দ-অপছন্দ করতে পারি না। জন্মগত বলতে এই শৈশব কৈশোরের সামাজিক পরিমণ্ডলের কথা বলা হচ্ছে। এই সামাজিক পরিমণ্ডল এমনকি অর্থনৈতিক বর্গ (যেমন শ্রেণী) -কেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় বানিয়ে দেয়। বড় হবার মধ্যে দিয়ে মানুষ তার জন্মগত পরিমণ্ডলের সীমাবদ্ধতা চিনতে পারে, তাকে অতিক্রম করতে চায়। কিন্তু তা ফিরে ফিরে আসে। এই টানাপোড়েন থাকে জীবনভর। নিজের সংস্কৃতি, নিজের পাড়া, নিজের চারপাশ, নিজের শৈশব কৈশোরের পরিমণ্ডল এই বিশ্বায়ন-উত্তর পৃথিবীতে সংস্কৃতির প্রাচুর্য্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার জমি দেয় — তার সহিষ্ণু এবং অপরের প্রতি আত্মীয়তা ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রকাশ জরুরি। বিদ্বেষের পটভূমিতে আত্মপরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি নিঃসন্দেহে কানাগলি। সহিষ্ণু এবং অপরের প্রতি আত্মীয়তা ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রকাশই সমতার সার্বিক প্রেক্ষাপট।
প্রশ্ন ২: অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বা শোষণকে কি কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না?
উত্তর : এই ইস্তাহারের গোটাটাই অর্থনীতি ভিত্তিক। শুধু ‘অর্থনৈতিকভাবে শোষিত’ এবং ‘অর্থনৈতিকভাবে শোষক’ অথবা ‘দরিদ্র’ ও ‘ধনী’ — এইরকম কোনো সামাজিক বিভাজন করা হয়নি, যেরকম বিভাজন অতীতে নানাসময়ে নানা রাজনীতি করেছে, অন্য বিভাজনগুলি না করে। অর্থাৎ অর্থনীতি-কে অক্ষ করে কোনো বিভাজন তৈরি করা হয়নি। বরং সমাজ ও সংস্কৃতি-কে ব্যবহার করা হয়েছে বিভাজনের অক্ষ তৈরি করার কাজে। এর কারণ হল — অর্থনীতি একটি বস্তুগত অবস্থা। তার উপাদানগুলিকে উন্নয়নের সূচকে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থনৈতিক স্তরের মধ্যে সমতাবিধানের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বিভাজন করা হয়নি। কারণ, এক, অর্থনৈতিকভাবে ‘শোষক’ এবং ‘শোষিত’ — এই স্তর বিভাজনটি এত সরল নয়। লগ্নি ও উৎপাদন/পরিষেবা এত বহুস্তরীয় হয়ে গেছে, যে, খুব কম সংখ্যক মানুষকে পরমভাবে শোষক অথবা শোষিত এই দুই বর্গের মধ্যে ফেলা যায়। তাছাড়া শোষিত-র বোধ যত সহজে ও শক্তপোক্তভাবে আপনজন তৈরি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি করতে পারে ওপরে উল্লিখিত আত্মপরিচয়গুলি। তার মানে এটা কিন্তু বলতে চাওয়া হচ্ছে না, যে, অর্থনৈতিক শোষণ নেই, বা তাকে অ্যাড্রেস করা যাবে না।
শোষক-শোষিত স্তরবিভাজনের চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহার হয় ধনী-দরিদ্র স্তরবিভাজন, যা-ও অর্থনৈতিক। আমাদের মনে হয়, দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠার জিনিস, দারিদ্র্য একইসাথে অনুন্নয়নের উপাদান এবং অক্ষমতা। দরিদ্র — এই স্তরবিভাজনের ওপর দাঁড়ালে পরিস্থিতির বদল ঘটানোর সক্ষমতা কমে যায়। কীভাবে দারিদ্র্য এবং শোষণ-কে সামাজিকভাবে আঘাত করা যায়, তার একটি পদ্ধতি হল সমতার ইস্তাহার।
প্রশ্ন ৩: উন্নয়নের সূচকগুলির ভিত্তি কী? এগুলো কি খেয়ালখুশিমতো নির্বাচন করা?
উত্তর : এই ইস্তাহারে উন্নয়নের সূচক বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, ব্যবসা, বিত্ত, ক্রয়ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, যোগাযোগের ক্ষমতা, সুপরিবেশ, অবকাশ, ভ্রমণ ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে।
শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়নের সূচক। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবোন্নয়ন সূচকের তিনটি উপাদানের একটি হল শিক্ষা, এবং আগে তা সাক্ষরতা এবং স্কুল শিক্ষা থাকলেও, এখন তা দাঁড়িয়েছে কলেজ শিক্ষা (মাস্টার ডিগ্রি অবদি শিক্ষাকে সূচকের সর্বোচ্চ মান ধরা হচ্ছে মানবোন্নয়ন সূচকে)।
স্বাস্থ্যও দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়নের সূচক। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবোন্নয়ন সূচকের তিনটি উপাদানের একটি হল স্বাস্থ্য, যা মাপা হয় জন্মপিছু আয়ুর নিরিখে এবং সেই সূচকের সর্বনিম্ন মান হল কুড়ি বছর ও সর্বোচ্চ মান হল পঁচাশি বছর। জন্মপিছু আয়ু একটি মোটমাট সূচক। আয়ু বাড়ে সাধারণ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো থাকলে। সাধারণ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো থাকার স্বীকৃত সূচকগুলি হল — শিশুমৃত্যু হার, জননীমৃত্যু হার, পুষ্টি, হাসপাতালের সুযোগ, এবং নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি। এগুলি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত সূচক।
চাকরি হল নিশ্চিত পর্যায়ক্রমিক রোজগার এবং সমাজের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে ভূমিকা রাখার একটি স্বীকৃত বন্দোবস্ত। দেখা যায়, প্রতিটি দেশেই চাকরি করার প্রবণতা বাড়ছে। চাকরিতে অংশগ্রহণ তাই একটি উন্নয়নের সূচক। এই সূচকেরও কিছু উপাদানমূলক সূচক আছে। যেমন, সরকারি চাকরি। চাকরিতে উন্নতি। ইত্যাদি।
ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক। ব্যবসা একই সাথে লগ্নির সূচকও বটে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায় ভূমিকা কতটা, তা সামাজিক উন্নয়নের পরিচয়।
বিত্ত একটি অর্থনৈতিক সূচক, যার মধ্যে দুটি ভাগ আছে — প্রথমটি হল আয় (এবং ব্যয় ও তার অনুপাত) এবং দ্বিতীয়টি হল সম্পত্তির পরিমাণ। উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক এটি।
ক্রয়ক্ষমতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক, যা তার উপার্জনের কতটা নিজের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারে, তার সক্ষমতাকে দেখায়।
রাজনৈতিক ক্ষমতা হল সামাজিক উন্নয়নের সূচক। নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার অংশীদারি কতটা এবং কোন পর্যায়ে।
যোগাযোগের ক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উন্নয়নের সূচক, যা কেবল অর্থনৈতিকই নয়, স্বাধীনতার সঙ্গেও যুক্ত।
সুপরিবেশ হল আরেকটি সূচক। এটি চলতি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, পরিবেশের অবনতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
অবকাশ ও ভ্রমণ আরো দুটি সূচক, যেগুলি সম্পূর্ণভাবে সাংস্কৃতিক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানদণ্ডে এগুলিকে মেলানো শক্ত। কিন্তু মানবোন্নয়নে এই দুটির ভূমিকা অপরিসীম।
এইরকম আরো কিছু উন্নয়ন সূচক যুক্ত করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৪: বিত্তশালীদের থেকে টাকা নিয়ে গরীবদের মধ্যে বিলি করার সঙ্গে মানবোন্নয়নভিত্তিক সমতার সম্পর্ক কী?
উত্তর : অসমতার সঙ্গে বিত্তের অসমান বন্টনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিত্তের অসমান বন্টন যে বেড়েই চলেছে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি জুড়ে, তা দেখান থমাস পিকেটি, ২০১৩ সালে। তিনি দেখান, লগ্নির রিটার্নের হার কোনো একটি দেশের বৃদ্ধির হারের তুলনায় বেশি দীর্ঘদিন ধরে থাকলে তা বিত্তের অসমান বন্টনের বৃদ্ধির জন্ম দেয়। অর্থাৎ ধনী ধনীতর হতে থাকে এবং গরীব গরীবতর হতে থাকে। আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে ১৯৮০ সালের পর থেকে যে ঘটনা ঘটে চলেছে। সর্বশেষ (অক্সফ্যাম) সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের ১ শতাংশ ধনীতম ব্যক্তির হাতে যা সম্পদ আছে তা দেশের মোট সম্পদের ৭৩ শতাংশ। এবং ২০১৬-২০১৭ এই আর্থিক বছরে ভারতে যে পরিমাণ সম্পদ তৈরি হয়েছে, তার ৮২ শতাংশ গেছে ধনীতম ১ শতাংশের হাতে।
ধনীর আরো ধনবান হওয়া এবং গরীবের গরীবতর হওয়া পুঁজিবাদের সঙ্গে জড়িত। পুঁজিবাদ আত্মধ্বংসের পথে না গেলে এটা হতেই থাকে। তখন পুঁজিবাদের ওই আত্মধ্বংস, অর্থাৎ বিশালাকার যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বিত্তের অসমান বন্টনের উল্টোরথ একমাত্র দেখা গেছিল বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপে। থমাস পিকেটি সহ আরো অনেকে যে সমাধানটি দিয়েছেন, সেটি হল — অতিধনীদের ওপর কর, মোট সম্পত্তির ওপর কর। এমনিতে ভোগের ওপর কর ছাড়াও দুই ধরনের করব্যবস্থা আছে। এক, আয়কর। দুই, বংশানুক্রমে পাওয়া সম্পত্তি-র ওপর কর। আমাদের দেশে আয়কর থাকলেও বংশানুক্রমে পাওয়া সম্পত্তির ওপর কর নেই। এই দুটি কর ছাড়াও আমেরিকা এবং ইউরোপে আরো একটি কর বসানোর পক্ষে আওয়াজ জোরালো হচ্ছে — সম্পত্তি কর। আমাদের দেশে স্থাবর সম্পত্তির ওপর সামান্য কিছু কর আছে, কিন্তু তা মূলতঃ বৃদ্ধিশীল নয়, অর্থাৎ সম্পত্তি বেশি হলে করের হারও বাড়বে, এমনকি ততোধিক হার-এ, এমন নয়। এবং তা সম্পত্তি কর ঠিক নয়, বাড়ি-কর, গাড়ি-কর, জমি-কর — এইরকম। আয়কর আমাদের দেশে বৃদ্ধিশীল, কিন্তু সর্বোচ্চ আয়কর আয়ের মাত্র ৩৫-৩৬ শতাংশের মতো।
কিন্তু এই করগুলি ছাড়া অতিধনী ১ শতাংশ এবং ধনীতম ১০ শতাংশের ওপর কর বসানোর পক্ষে সওয়াল করেন পিকেটি সহ অন্যান্যরা। ইতিমধ্যে এই ধরনের কর আছে ইউরোপের কিছু দেশে। ঘটনা হল, এই ধরনের সম্পত্তি কর ১৯৯০ সালে উন্নত তথা ধনী দেশগুলির মধ্যে ১২টিতে ছিল, কিন্তু পরে উঠে যায় বেশিরভাগ দেশে। স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ইত্যাদি দেশে এই কর আছে। সম্প্রতি আমেরিকা ও ফ্রান্সে দাবি উঠেছে ধনীতম ১ শতাংশের মোট সম্পত্তির ওপর ২-৩ শতাংশ হারে বার্ষিক কর বসানোর, এবং সেই কর জমি সম্পত্তি বা বসতবাড়ি সম্পত্তি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক সম্পত্তি — সবকিছু হিসেবে ধরে এবং সবকিছুর ওপর আলাদা আলাদা কর দেবার পরও অতিরিক্ত হিসেবে এই কর। আরেকটি দাবিও উঠেছে, সম্পত্তি করের পাশাপাশি আয়করের বৃদ্ধিশীল করের সর্বোচ্চ হারও বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি করা, যাদের অতি উচ্চ আয় তাদের জন্য।
সম্পত্তি কর-এর ওপর পিকেটির হিসেবটা এরকম, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ল্য মন্দ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তার ব্লগে তিনি বলেছিলেন, ব্যক্তির মোট সম্পত্তি (ব্যক্তিগত ব্যবহার + বাণিজ্যিক) একটা চৌকাঠ পেরোনোর পরই বৃদ্ধিশীল হারে তার ওপর অতিরিক্ত বার্ষিক কর বসানো হোক। এই কর ২ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, এমনকি তারও বেশি হতে পারে। তার হিসেবটা এরকম — এতে ওই চৌকাঠের অতিরিক্ত সম্পত্তি একটি নির্দিষ্ট বছরের (ধরা যাক ৩০ বছর) মধ্যে রাষ্ট্রের কাছে (এবং তার মাধ্যমে জনগণের কাছে) ফেরত আসবে।
প্রশ্ন ৫: কিন্তু ধনীদের কাছ থেকে টাকা নিলে তার কি অর্থনীতিতে কুপ্রভাব পড়বে না?
উত্তর : এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমতঃ পুঁজির বহির্গমন। কিন্তু স্থাবর সম্পত্তির ভিত্তিতে এই সম্পত্তি কর বসালে তা উড়িয়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। দ্বিতীয় আশঙ্কা — অতিধনী কমে যাওয়া মানে পুঁজির সঞ্চয়ন কমে যাওয়া, এতে বড় কোনো পুঁজিনিবিড় শিল্প গড়তে অসুবিধা হবে। এর উত্তরে বলা যায়, এখন শিল্প বলতে বেশিরভাগই কর্পোরেট ধাঁচের এবং ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে লগ্নি-ঋণ তার মূল পুঁজি। একটি চৌকাঠের নিচে ব্যক্তি পুঁজি তো থাকছে, যা কর্পোরেট মালিকানায় শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে কাজ করবে। বরং লগ্নি-বাজারকে বিস্তৃত করবে। তা ছাড়া, এটাও ভেবে দেখার মতো — বড়ো ও ভারী পুঁজিনিবিড় শিল্প তো রাষ্ট্রায়ত্ত্ব হওয়া উচিত। তাতেই তো দেশের মঙ্গল। কেন তা ব্যক্তি পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রণে থাকবে? কর্পোরেট মালিকানার শিল্পতেও, বড়ো প্রোমোটার কি ভালো?
তবে এতদ সত্ত্বেও বৃহৎ পুঁজিপতি তথা লগ্নিকারী ও লগ্নি বাজারের কাছ থেকে ধাক্কা আসতে পারে। কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে তার মোকাবিলা করা দরকার। এই ধাক্কার একটি প্রকৃষ্ঠ সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট। এই বাজেটে কর্পোরেট সংস্থায় প্রোমোটারের অংশীদারীর সর্বোচ্চ সীমা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬৫ শতাংশ করতে বলা হয়। একইসাথে অতিধনীদের আয়কর কিছুটা বাড়ানো হয়। যেমন, ২-৫ কোটি টাকা যাদের বার্ষিক আয়, তাদের আয়করের ওপর অতিরিক্ত কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়, এবং বার্ষিক ৫ কোটি টাকার বেশি যাদের আয়, তাদের আয়করের ওপর অতিরিক্ত কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। এতে তাদের আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৯ শতাংশ এবং ৪২.৭৪ শতাংশ। এতে শেয়ার বাজারে, অর্থাৎ লগ্নি বাজারে ধ্বস শুরু হয়ে যায়। লগ্নি বাজার সূত্রে জানানো হয়, এর ফলে বিদেশী লগ্নিকারীরা লগ্নি তুলে নিচ্ছে। ইত্যাদি। পরে ফাইনান্স বিল সংসদে পেশ করার সময় তাতে একটি নতুন ধারা ঢুকিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় সরকার, যার ফলে অতিধনীদের (অর্থমন্ত্রীর হিসেব মতো — হাজার পাঁচেক লোক মাত্র) এই অতিরিক্ত আয়কর অনেকটাই লঘু হয়ে যায়। সেই নতুন ধারাটি হল (দেশি বা বিদেশী) লগ্নিকারী যদি ব্যক্তি বা ট্রাস্ট হিসেবে লগ্নি করার বদলে সেটাকে কোম্পানিতে বদলে নেয়, তাহলে আর তাকে এই অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে না। অর্থাৎ, অতিধনীরা যদি কর্পোরেট লগ্নিসংস্থা বানিয়ে তার প্রোমোটার হয়ে যায়, তাহলে আর তাকে এই অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে না। অর্থাৎ অতিধনীরা যদি কর্পোরেট সংস্থার প্রোমোটার হয় তাহলে তাকে আর এই অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে না। আয়করের সামান্য এই বৃদ্ধির ফলে এই পরিমাণ ধাক্কা এবং একমাসের মধ্যে প্রায় পুরোটাই পিছু হটা — তাও এমন একটি সরকারের তরফে যার একটি পার্টিরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সংসদে — তা দেখিয়ে দেয় — আয়করের বৃদ্ধিশীলতা অনেকটা বাড়ানো, বংশানুক্রমে প্রাপ্ত সম্পত্তির ওপর কর, বা চৌকাঠ পেরোনো সম্পত্তির অধিকারীদের ওপর অতিরিক্ত চড়া বার্ষিক সম্পত্তি কর — এতে কী হতে পারে।
প্রশ্ন ৬: অতিধনীদের ওপর চড়া হারে কর না চাপিয়ে কর্পোরেটদের দান-ধ্যানের ওপর ব্যাপারটা ছেড়ে রাখা যায় না?
উত্তর : ঠিক এই বক্তব্য বিল গেটস রেখেছিল থমাস পিকেটির কাছে। পিকেটি উত্তর দিয়েছিল, চড়া হারে কর এর চাপ না থাকলে বেশিরভাগ অতিধনী দান-ধ্যানটাও করবে না। বিল গেটস ব্যতিক্রম মাত্র।
প্রশ্ন ৭: সরাসরি গরীবদের দিয়ে দিলে অপচয় হবে, ফেরত আসবে আবার সেই ধনী বা অতিধনীদের হাতে, তার চেয়ে সরকার পরিকাঠামো ইত্যাদিতে ব্যায় করলে পারে না?
উত্তর : যদি ফেরত আসে ধনী বা অতিধনীদের হাতে, তাতেই বা ক্ষতি কী? ফের তো করের কারণে তা তাদের হাতছাড়া হবেই। আর গরীব মানুষ টাকা পেয়ে কী করে, সেটাও দেখা যাক না। কেন তাকে এত ঠুনকো বা টাকা ঠিকমতো খরচে অক্ষম বলে মনে করা? আমাদের দেশে যারা গরীব তারা বংশানুক্রমে গরীব। গরীবী তার মধ্যে একধরনের হীনমন্যতা তৈরি করে রেখেছে। বিত্ত থাকা আর না থাকার মধ্যে বস্তুগত ফারাক যেমন আছে — যথা ক্রয়ক্ষমতা ইত্যাদি নানা ধরনের সক্ষমতা, শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রভৃতি উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে থাকা — তেমনি মানসিক একটা ফারাকও তৈরি করে। বিত্ত থাকা একটা বল-ভরসা তৈরি করে। বিশেষ করে যখন আমরা দেখছি, দেশের গরীবতম ৫০ শতাংশ লোকের (৬৭ কোটি মানুষ) সম্পদের বৃদ্ধির হার বছরে ১ শতাংশেরও কম (মাথায় রাখা দরকার, দেশের জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির হার সাত শতাংশের মতো, মতান্তরে পাঁচ), এই পরিস্থিতিতে গরীবরা এমনকি নিজের সাংবিধানিক অধিকারটুকুর জন্য যে আওয়াজ তুলবে সেই সক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলছে, তার এই কোনোমতে টিঁকে থাকার জীবনধারনের জন্য। ফলতঃ সমতার আদর্শের ক্ষেত্রে ধনীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ — ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ গরীবদের মধ্যে সেই টাকাটা বিলিয়ে দেওয়া। ডিবিটি বা ডাইরেক্ট ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে।
প্রশ্ন ৮: গরীবের সম্পদ বৃদ্ধি তো হচ্ছে? তাহলে?
উত্তর : যদি দেশের সম্পদ বৃদ্ধির হার সাত শতাংশ হয় আর দেশের পঞ্চাশ শতাংশ গরীব মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির হার এক শতাংশ হয়, তাহলে গরীব আরো গরীব হল। সমতার আদর্শ সম্পদ বৃদ্ধি-কে পরমভাবে দেখে না, আপেক্ষিকভাবে দেখে। কেন? কারণ, ‘সম্পদ বৃদ্ধি’ কোনো অনন্ত এবং ইচ্ছে হলেই যত খুশি বাড়ানো যায়, তেমন প্রক্রিয়া নয়। নতুন সম্পদ তৈরিতে মূল যে তিনটি জিনিস লাগে, তা হল থেকে যাওয়া পুরনো সম্পদ, শ্রম এবং প্রাকৃতিক সম্পদ। তিনটির ভাঁড়ারই অসীম নয়। সীমিত। নতুন সম্পদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এই তিনটি জিনিস।
একইসাথে, নতুন সম্পদের ভাগ কত পেল, অর্থাৎ তার সম্পদের বৃদ্ধির হার কত, তার ওপর নির্ভর করে থাকে মনুষ্য সমাজে ক্ষমতা। এই ক্ষমতাও আপেক্ষিক। ক্ষমতার আধার হিসেবে রাষ্ট্র থাকার কারণে সেখানে ধনীতরদের পাল্লা ভারী হয়। যার সম্পদের বৃদ্ধি বেশি হল, সে যার সম্পদের বৃদ্ধি কম হল, তার তুলনায় বেশি দামী উকিল দিতে পারে কোর্টে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে বেশি ডোনেশন দিতে পারে, পুলিশ-প্রশাসনের সাংবিধানিক কর্তব্য যেহেতু সম্পত্তি রক্ষা তাই পুলিশ-প্রশাসনও ধনীতরদের পক্ষে থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি।
প্রশ্ন ৯: মানবোন্নয়ন সূচকে সমতাবিধানে সংরক্ষণ-কে পন্থা হিসেবে নিলে তা কি অসংরক্ষিতদের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করবে না? অভিজ্ঞতা তো সেরকমই।
উত্তর : আমাদের এখানে মূলতঃ দুই ধরনের সংরক্ষণ চালু আছে এবং আরেক ধরনের সংরক্ষণ অতি সম্প্রতি চালু হয়েছে। উচ্চশিক্ষা, চাকরি এবং জনপ্রতিনিধিত্বতে তপশীলি জাতি ও তপশীলি উপজাতি সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ। এই সংরক্ষণের মধ্যে তপশীলি জাতিগুলির সংরক্ষণের যুক্তি ছিল, হিন্দু ধর্মের চিরাচরিত জাত প্রথার কারণে ও অস্পৃশ্যতার কারণে এই সম্প্রদায়গুলি ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে সমস্ত রকম শিক্ষা দীক্ষা সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি থেকে।এদের কম পারঙ্গমতার জন্য এটা দায়ী। তাই এদের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। সেটাই জাত-প্রথার ভিকটিমদের জন্য ন্যায়বিচার – এটা তপশীলি জাতি সংরক্ষণ। আদিবাসীরা আধুনিক জীবনযাপনের ধারা থেকে বিযুক্ত। তাদের জন্য সংরক্ষণ তাদেরকে দেশের মানুষের জীবনযাপনের মূল স্রোতে তাদের সামিল করতে চেয়ে — তপশীলি উপজাতিদের মধ্যে এরা আসে। এই দুই সংরক্ষণ ছাড়াও কয়েক দশক আগে শুরু হয়েছে অন্যান্য পশ্চাদপদ বর্গ-র জন্য সংরক্ষণ। এই ওবিসি সংরক্ষণ কিন্তু ওবিসিদের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে যারা এগিয়ে নয়, তাদের জন্য। এবং এই ওবিসি সংরক্ষণ কিন্তু ওবিসি জনসংখ্যার তুল্য শতাংশ পরিমাণ নয় (তপশীলি জাতি এবং উপজাতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ কিন্তু জনসংখ্যার তুল্য শতাংশ পরিমাণ, প্রায়), অর্ধেকের একটু বেশি। এই ওবিসি সংরক্ষণের যুক্তি ছিল, অস্পৃশ্যতাজনিত কারণে না হলেও, সাধারণভাবে জাতব্যবস্থা ও বর্ণাশ্রম প্রথার কারণে বংশগত শ্রমবিভাজন তথা বংশানুক্রমিক পেশা চালু আছে। ফলে কিছু জাত বা সামাজিক বর্গ বা সম্প্রদায় ঐতিহাসিক কারণেই অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আধুনিক শিক্ষা, চাকুরি ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। ফলতঃ তাদেরও অতিরিক্ত সুযোগ দেওয়া দরকার। এছাড়া আছে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ (জনপ্রতিনিধিত্বতে শুধু) অথবা অতিরিক্ত সুযোগ (বয়স ইত্যাদি)। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালে প্রথম ওবিসি কমিশন তথা কাকা কালেলকার কমিশনের রিপোর্ট মেয়েদের সব্বাইকে অন্যান্য পশ্চাদপদ বর্গ বলে উল্লেখ করেছিল (এই রিপোর্ট সরকার গ্রহণ করেনি)। বছর দশেক আগে থেকে মুসলিম ধর্মের কিছু সম্প্রদায়ও ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় এসেছে, আরও বেশ কিছু জাত-ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ওবিসি-তে — যদিও ওবিসি সংরক্ষণের মোট পরিমাণ পরিবর্তন হয়নি, অর্থাৎ, বাড়েনি। ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় আসা মানুষদের মধ্যে থেকে জনসংখ্যার তুল্যর তুলনায় অর্ধেক সংরক্ষণ খুবই অপ্রতুল — এই অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়।
সাম্প্রতিক অতীতে অসংরক্ষিত অগ্রবর্তী জাত-গুলির মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নয়, তাদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে ইডবলুএস সংরক্ষণ নাম দিয়ে। প্রসঙ্গতঃ এই ইডবলুএস কিন্তু জাত-ভিত্তিক নয়, সোজাসুজি কিছু অর্থনৈতিক মানদণ্ডের ওপর তৈরি।
আমরা যে সংরক্ষণের কথা বলছি, তা এই তিন ধরনের চেয়েই আলাদা। ইডবলুএস -এ ব্যক্তিকে কোনো সামাজিক বর্গের অন্তর্গত হিসেবে না ভেবে শুধু ব্যক্তি হিসেবে ভাবা হয়। এবং তার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার বিচার করা হয় (জমি, নিজ বাড়ি, বার্ষিক পারিবারিক উপার্জন ইত্যাদি)। শুধু এই পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে সংরক্ষণের ফলে সম্প্রদায়গত সামাজিক গতিশীলতার ফ্যাক্টরটিকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হয় এবং এতে সংরক্ষণের সুবিধা পায় তারাই, যারা ওই সামাজিক গতিশীলতায় এগিয়ে। উদাহরণ স্বরূপ, অগ্রবর্তী জাতগুলির মধ্যে ব্রাহ্মণ, বদ্যি, কায়স্ত, বানিয়া-দের সঙ্গে কি পারিবারিক পড়াশুনায়, উচ্চপেশার মানুষদের সঙ্গে চেনাজানা-ওঠাবসা-যোগাযোগ-আত্মীয়তায় পারবে কৃষক জাতগুলি? পারবে না। ফলতঃ উচ্চশিক্ষা, চাকরি ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় (এবং জনপ্রতিনিধিত্বেও) ইডবলুএস সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে যাবে এই অংশটিই। কেস স্টাডি হিসেবে উচ্চশিক্ষায় নানা ধরনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় এই বছর ইডবলুএস-এ কারা কারা পেলে, তাদের কতজন ব্রাহ্মণ, বদ্যি, কায়স্ত, বানিয়া এবং কতজন কৃষক জাতগুলির — এবং জনসংখ্যার শতাংশের তুল্য কিনা এই পাওয়াগুলি — তা পরখ করে দেখা যেতে পারে। আমরা মনে করি, ইডবলুএস সংরক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গীগতভাবেই ভ্রান্ত, কারণ এটায় ব্যক্তিকে কেবলমাত্র তার আশু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দিয়ে বিচার করা হয়, অর্থাৎ, প্রায় ব্যক্তি হিসেবেই বিচার করা হয়। এটি প্রাকারান্তরে অগ্রবর্তী জাতগুলির মধ্যে অকৃষক অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, বদ্যি, কায়স্ত ও বানিয়াদের মধ্যে যাদের আশু পারিবারিক অর্থনীতির হাল খুব ভালো না, তাদের সুবিধা করার জন্য করা হয়েছে। ইডবলুএস সম্পূর্ণভাবে কুলীনদের অর্থাৎ সামাজিকভাবে উচ্চকোটিতে বিচরণশীলদের সুবিধা করে দেবার একটি বন্দোবস্ত।
অপরদিকে এসসি-এসটি-ওবিসি সংরক্ষণের মধ্যে, বিশেষতঃ ওবিসি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে — কোনো সামাজিকভাবে প্রভাবশালী, তুলনায় বেশি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল, সংখ্যায় একটু বেশি — এই ধরনের জাতগুলি এসসি, এসটি এবং ওবিসি সংরক্ষণের গোটাটা ভোগ করছে, কিন্তু বাকিরা সুযোগ পাচ্ছে না — এরকম একটা অভিযোগ আছে। ২০১৭ সালে স্থাপিত জাস্টিস রোহিনী কমিশন-এর মাধ্যমে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা। ২০১১ সালের জাত-জনগণনার ফল যদি প্রকাশিত হত তাহলেও জানা যেত। এসসি-এসটি সংরক্ষণের মধ্যে অর্থনৈতিক হাল-এর কোনো ঊর্ধসীমা নেই। সেটা না থাকায় এই সংরক্ষণের সুযোগ অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে যারা স্বচ্ছল — তাদের মধ্যে কুক্ষীগত হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় — পশ্চিমবঙ্গে তপশীলি জাতি আছে ৫৯টি, যাদের মোট জনসংখ্যা ১৯৯১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জনসংখ্যার ২৩.৬২ শতাংশ এবং পশ্চিমবঙ্গে তপশীলি জাতি-র সংরক্ষণ ২২ শতাংশ। কিন্তু দেখা দরকার — এই সবক’টি জাতির উন্নয়ন সূচকে অবস্থান কী কী রকম। উদাহরণ স্বরূপ — এই সবক’টি জাতির উচ্চশিক্ষায় ঢোকার হার কত, গত পাঁচ বছর ধরে। যদি দেখা যায় — কারোর বেশ কম এবং কারোর বেশ বেশি, তাহলে বোঝা যাবে, ওই জাতির আলাদা করে বিশেষ সংরক্ষণ দরকার এবং যাদের বেশ বেশি — তার সংরক্ষণের ভাগ কমানো দরকার। এইভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর, ধরা যাক পাঁচ বছর পর পর, উন্নয়নের সূচকগুলিতে অবস্থানের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণের ভাগ কমানো এবং বাড়ানো যেতে পারে। সংরক্ষণের সাথে সাথেই বিশেষ সুবিধাগুলির ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন, বয়সের ছাড়, স্কলারশিপ ইত্যাদি। এবং একইসাথে — উন্নয়নের সূচকগুলিতে অবস্থানের ভিত্তিতে শুধু জাতগত-ভাবে নয়, লিঙ্গ, ভাষা, ভৌগলিক অবস্থান, ধর্ম, অর্থনৈতিক বর্গ বা শ্রেণী — প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এই সংরক্ষণ এবং/অথবা সুবিধা চালু করা দরকার। এবং সংরক্ষণ/সুবিধা উচ্চশিক্ষা, চাকরি এবং রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিত্ব শুধু নয় – জনজীবন বা পাবলিক লাইফের সমস্ত ক্ষেত্রেই করা প্রয়োজন।
জনজীবন বা পাবলিক লাইফের ক্ষেত্রে ১০ ভাগ যদি সরকারি হয়, তাহলে দেখা যাবে ৯০ ভাগ অসরকারি। যেকোনো ধরনের অসরকারি উদ্যোগে, তা সে বাণিজ্যিক হোক বা সামাজিক, সেখানে এই সমতার আদর্শ মেনে, যারা আসছে না বা যারা আসে না — তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত আশু প্রয়োজন।
প্রশ্ন ১০: মানবোন্নয়ন সূচকে সমতাবিধানে সংরক্ষণ-কে পন্থা হিসেবে নিলে তা কি উচ্চশিক্ষা বা চাকরিতে মেধার গুরুত্বের সঙ্গে আপস করা হলো না?
উচ্চশিক্ষা মানে মানবসম্পদ তৈরি, আর চাকরি মানে হল, ব্যক্তিটি দেশের সম্পদ-বৃদ্ধিতে অংশ নিচ্ছে কি না। দেশের উন্নয়নে অংশ নিচ্ছে কি না। উচ্চশিক্ষায় কম অংশগ্রহণ এবং বেকারত্ব রাষ্ট্রের বা সরকারের লজ্জা বা অক্ষমতা। যে ঢুকতে পারল না তার বা বেকারের লজ্জা বা অক্ষমতা নয়। ‘যোগ্যতর লোকের চাকরি’ এটা একটা ভুল ভাবনা। এই ভুল ভাবনাটা আমাদের মতো দেশে যেখানে বেকারের সংখ্যা অনেক, বেকারত্বের হার-ও বেশি এবং নানা ধরনের চাকরির মধ্যে বেতন বৈষম্য ও নিশ্চয়তার বৈষম্য খুব বেশি – সেখানে চলে। উদাহরণ স্বরূপ, ধরা যাক – স্কুলে শিক্ষকের চাকরি। যত শিক্ষক আছে – তাদের নিজেদের মধ্যেই তো ‘যোগ্যতা’ র ভালো ফারাক আছে। এবার আমি তলার লাইনটা কোথা দিয়ে টানব? দেখা যায়, চাকরির ক্ষেত্রে একটা কোয়ালিফিকেশন লেখা থাকে – এসেনশিয়াল। এর থেকে বড় আর কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি (পরীক্ষা বা অন্য নানা কিছু) আসলে উপরিউক্ত ‘অভাবের কারণে’ বানানো। ‘যোগ্যতর’ বলে কিছু হয় না কোনো কাজে বা কোনো উচ্চশিক্ষায়। ‘যোগ্য’ হয়। বরং চাকরিতে সংরক্ষণের ফলে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয় (সরকারি চাকরিতে প্রমোশনের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের পক্ষে একটি বিচারের সময় ‘মেধা’ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল (জাস্টিস চন্দ্রচূর এবং ইউ ইউ ললিত, মে ২০১৯), “… a “meritorious” candidate is not merely one who is “talented” or “successful” but also one whose appointment fulfils the constitutional goals of uplifting members of the SCs and STs and ensuring a diverse and representative administration” (অনুবাদ — “… একজন ‘মেধাবী’ প্রার্থী মানে কেবল সে ‘প্রতিভাবান’ বা ‘সফল’, তা নয় বরং একইসাথে যার নিয়োগের মাধ্যমে এসসি, এসটি জাতিগুলির উন্নয়নের যে সাংবিধানিক লক্ষ্য তা পূরণ হবে এবং একটি বৈচিত্রপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসন নিশ্চিত হবে।”) উন্নয়ন মানে, একটা চিরাচরিত ‘স্যালারিড’ ক্লাসের বদলে সমাজের সর্বস্তরে ‘স্যালারিড’ ক্লাসের বিকাশ ঘটা। চুনী কোটালের ঘটনা তো বেশিদিন আগের কথা তো নয়। কীভাবে সমাজের সর্বস্তরে সরকারি ও নিশ্চয়তাসম্পন্ন বেসরকারি চাকুরির প্রসারে বাধা দেওয়া হয় – এটা তার একটা বড় উদাহরণ। এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে – কিন্তু এখনও বেশ খারাপ। এখনও নিশ্চয়তাসম্পন্ন এবং উচ্চ বেতনের চাকরির ক্ষেত্রে ‘অপর’কে জায়গা দিতে বা সমানভাবে নিতে বাধা আছে বিস্তর। সংরক্ষণবিরোধিতা এবং মেধা বা যোগ্যতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব এই বাধা-কে সংহত করে।
——————————————————————————-
সমতার ইস্তাহার
(খসড়া)
সমতা আর সমানতা এক নয়। নিচের ছবিতে এই দুই-এর মধ্যে ফারাক স্পষ্ট। আমরা সমানতার বদলে সমতাভিত্তিক কিছু ব্যবস্থা চাইছি।

১) বর্তমান ভারতে সমতা নেই। জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণী-বর্ণ-জাতিসত্ত্বা-ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদি ভেদ-এ কারোর বেশি সম্পদ তো কারোর কম। কারোর শিক্ষার হার বেশি তো কারোর কম। কারোর চাকরি বেশি, ব্যবসা বেশি। কারো কম। কারো স্বাস্থ্য ভালো, কারো মন্দ। ফলতঃ আমরা সমতার ইস্তাহার তৈরিতে বাধ্য হচ্ছি। এই ইস্তাহার একটি উদ্দেশ্য নিয়ে, তা হল এই যে অসমতা — তার অবসান।
২) ভেদাভেদ নানা প্রকার। ভেদাভেদ বরাবর বিদ্বেষও আছে ষোলো আনা। তাই ভেদাভেদগুলি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক না। আমরা মনে করি, ভেদাভেদগুলি একে অন্যের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান নিয়ে তখনই চলতে পারবে, যখন অসমতা ঘুঁচে গিয়ে সমতা আসবে। নচেৎ পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ অনিবার্য, তাই সমতার ইস্তাহার এই পারস্পরিক বিদ্বেষ কাটানোরও একটা উপায়।
৩) ধর্মের দিক দিয়ে দেখলে ভারতে প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বলে নিজেদের পরিচয় দেন। দেখা যায়, শিক্ষা স্বাস্থ্য সব দিক দিয়েই হিন্দুরা এগিয়ে মুসলমানদের তুলনায়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায়। তাই মুসলিমদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, রোজগার, ব্যবসা, বাসস্থান ইত্যাদি উন্নয়ন সূচকে অমুসলিমদের সমপর্যায়ে আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (সংরক্ষণ, ইনসেনটিভ ইত্যাদি) নিতে হবে। মুসলিমদের মধ্যে অপরাধের হার বেশি। তা কমাতেও সাহায্য করবে এই বিশেষ ব্যবস্থা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও উক্ত বিশেষ ব্যবস্থা চাই।
৪) লিঙ্গের দিক দিয়ে পুরুষ ও মহিলার (এবং অন্যান্য লিঙ্গের) ফারাক উল্লেখযোগ্য। সেই ফারাক সমস্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক পরিসর এবং সমস্ত জায়গায় ঘোঁচাতে হবে। এবং তার জন্য মেয়েদের দিকে টেনে নানা ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) জাতের দিক দিয়ে এসসি এসটি ওবিসি রিজার্ভেশনের একটা ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এইসমস্ত ক্যাটেগরির মধ্যে পড়ে যে বিপুল সংখ্যক জাত, যাদের সাব-কাস্ট বলা হয়, তার মধ্যে দিয়ে যেন ভাবা হয় এসসি একটা জাত, আর তার অন্তর্গত কোনো একটা জাত হল এসসি-র সাব কাস্ট। এই ধারনা ভুল। এসসি, এসটি, ওবিসি এগুলো অফিসিয়াল বা সরকারি নাম মাত্র। আসল জাত হল, কুর্মী, মাহাতো, সাঁওতাল, লোধা, শবর, জাঠ, পতিদার ইত্যাদি। এসসি, এসটি, ওবিসি নামক সরকারি বন্ধনী দিয়ে নয়, জাতকে তার নিজস্ব জাত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সংখ্যাগত অনুপাতে সুবিধার (সংরক্ষণ, ইনসেনটিভ ইত্যাদি) বন্দোবস্ত করতে হবে শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি সহ সর্বত্র।
৬) ফেডারেলিজমকে উন্নয়নের নিরিখে পুনঃসংজ্ঞায়ন করতে হবে। একটি রাজ্য যদি অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় উন্নয়নের সূচকগুলিতে পিছিয়ে থাকে অনেকটাই, তাহলে সেই রাজ্য দুর্বল হতে বাধ্য। ফেডারেলিজম-এর পূর্বশর্ত রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নয়ন সূচকের সমতা। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
৭) শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষার ভূমিকা নির্ধারক। ফলতঃ উন্নয়নের এই নিরিখগুলিতে ভাষাগত অসমতা, যা কি না বৈষম্যের রূপে আসে – এই ভাষাগত অসমতা দূরীকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮) সমস্ত সামগ্রিক স্বার্থের কাজ – যেমন পরিবেশ রক্ষা, জৈব চাষ, শরীরচর্চা, বৃক্ষরোপণ, ত্রাণকার্য — এগুলোতে সরকার ও মানুষের সংগঠনগুলি কাজ করে। এই সমস্ত কাজ এবং উদ্যোগে জাত-লিঙ্গ-শ্রেণী-ধর্ম-ভাষা-জাতি ইত্যাদি ভিত্তিক সমতামূলক অংশগ্রহণ চাই। এগুলির সুফল ভোগও সমতার আদর্শের ভিত্তিতে হতে হবে।
৯) সম্পদের অসম বন্টন এবং এই অসাম্যের বেড়ে চলা আমাদের দেশের এক সমস্যা। হয়ত গোটা পৃথিবীরই। পুঁজিবাদের কারণে এই অসাম্য বেড়েই চলেছে, অর্থনীতিবিদরা তাই দেখাচ্ছেন। সেই সমস্যার নিরসনে এখানেও সমতার আদর্শের প্রয়োজন। বড়লোকদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নিয়ে গরীবদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। এবং এই পুনর্বন্টন চলতেই থাকবে, যতদিন বিত্তবন্টনে অসাম্য থাকবে।
১০) চাকরির বেতনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বেতন এবং সর্বনিম্ন বেতনের মধ্যে তফাতও বড্ড বেশি। এক্ষেত্রেও সমতা প্রয়োজন। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সাপেক্ষে বেতনের কমবেশি হতে পারে, কিন্তু সর্বোচ্চ বেতন কখনো সর্বনিম্ন বেতনের তিন-চার গুণের বেশি হওয়া চলবে না।
১১) এই ইস্তাহারে উন্নয়নের সূচক বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, ব্যবসা, বিত্ত, ক্রয়ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, যোগাযোগের ক্ষমতা, সুপরিবেশ, অবকাশ, ভ্রমণ ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে।
১২) এই ইস্তাহার একটি অস্থায়ী কর্মসূচী। এটা কোনো সংগঠনের কর্মসূচী নয়। কোনো কার্যক্রমও নয়। সাধারণ ইস্তাহার। অনেকটা নুনের মতো। আমাদের চারপাশের নানা কর্মউদ্যোগের স্বাদ বদল করার ক্ষমতা রাখে এই ইস্তাহার, কিন্তু তা করতে গিয়ে এ সেই কর্মউদ্যোগগুলির মধ্যে নিজের কেলাসিত রূপটি বিসর্জন দেয়, নিজে আলাদা অস্তিত্বে থাকে না। এই ইস্তাহার নিজে কখনোই কোনো কেলাসিত রূপ হয়ে উঠবে না। এই ইস্তাহার মাঝে মাঝে পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন হতে পারে। আপাতত একটা ফেসবুক পেজ-এ এই ইস্তাহারটি থাকতে পারে এবং এই ইস্তাহারের উপযোগী নানা তথ্য সম্বলিত প্রচার সমীক্ষা কথোপকথনের জন্য মাসে একদিন করে কয়েক ঘন্টার জন্য বসা যেতে পারে, ইচ্ছুকদের নিয়ে। এটুকুই তার সংগঠন।