২০২৩ সালের মে মাসের ৩-৪ তারিখে এক ভয়াবহ জাতিদাঙ্গা ঘটে মণিপুরে, যার রেশ এখনও চলছে। সরকারি মতে প্রায় দেড়শ’ মানুষ মারা গেছে এখনও অবধি। হত্যা এবং যৌন হিংসার ভয়াবহ সব ঘটনার বিবরণ বাইরের পৃথিবীর কাছে পৌঁছচ্ছে অনেক দেরিতে, কারণ মে মাসের ৩-৪ তারিখ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মণিপুরে। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২৬ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল ভিডিও মণিপুরের ট্র্যাজেডিকে সারা পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত করে দেয়।
আমরা এই পৃষ্ঠায় মণিপুর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ইংরেজি মিডিয়া (প্রিন্ট এবং ওয়েব) এবং অন্যান্য সূত্র পিডিএফ আকারে রাখছি, সামান্য ভূমিকা সহ। কোনও ভিডিও বা অডিও কিছু রাখা হচ্ছে না। প্রকাশের মূল তারিখ অনুযায়ী এগুলো সাজানো হচ্ছে। পিডিএফ-এর শুরুতেই মূল লিঙ্ক এবং শেষে সেটা কবে অ্যাক্সেস করা হয়েছে, তা থাকছে। হাজার হাজার সংবাদের মধ্যে থেকে সংবাদচয়ন করেছি আমরা, ‘বসুন্ধরায় আজাদি’-র সম্পাদকমণ্ডলী।
এই পৃষ্ঠাটি বেশ কিছুদিন ধরে আপডেট হতে থাকবে।
পাঠকদের কাছে অনুরোধ, আমাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণে থেমে না থেকে মূল সংবাদগুলিও পড়তে। উত্তর-পূর্বের সংবাদমাধ্যম গুলিতে প্রতিবেদনে সংবাদ অনেক বেশি থাকে, রাজনৈতিক প্যাঁচপয়জার তথা সেলিব্রিটি নেতাদের বাগযুদ্ধ থাকে না। তাই উত্তর-পূর্ব তথা মণিপুরের সংবাদমাধ্যম ধারাবাহিকভাবে পড়লে সমস্যাটি অনেক গভীরে গিয়ে জানা সম্ভব।
আমরা লক্ষ্য করছি, উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য জায়গার মতোই মণিপুর রাজ্য-র খবর যেহেতু নিয়মিত এখানকার সংবাদমাধ্যমে বা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয় না, বা কেন্দ্রীয় ক্ষমতার রাজনীতির তরজার অঙ্গ হিসেবে প্রকাশিত হয়, তাই মণিপুরের চলমান জাতিহিংসাকে মিডিয়ায় দেখা এবং দেখানো হচ্ছে “চীন বনাম ভারত”, “বিজেপি বনাম কংগ্রেস”, “হিন্দু বনাম খ্রীষ্টান” ইত্যাদি দ্বৈত দিয়ে। এগুলি সবই মাটির ঘটনাকে এরোপ্লেন থেকে দেখে বর্ণনা করলে যেমন লাগে, তেমনই হাস্যকর। তবে কি মণিপুরের এই জাতিহিংসায় কোনও দ্বৈত নেই? সম্ভবতঃ আছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব ভারতের সংবাদের একটি জনপ্রিয় পোর্টাল ইপাও ডট নেট সাম্প্রতিক জাতিহিংসার একটি কালপঞ্জী প্রকাশ করেছে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে, সাঙ্গাই এক্সপ্রেস ও অন্যান্য কাগজে প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক সহযোগে। — সম্পাদকমণ্ডলী
এক নজরে মণিপুর
মণিপুরকে সদ্যস্বাধীন ভারত রাষ্ট্র নিজের অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৪৯ সালে। ১৯৭২ সালে মণিপুর রাজ্যের মর্যাদা পায়। ভারতের সংবিধানের ৩৭১সি ধারায় মণিপুরের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করা হয় — পাহাড়ি অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা আলাদা একটি কমিটি হিসেবে থাকবে এবং মণিপুর সরকার এই কমিটিকে এড়িয়ে পাহাড়ের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না; এবং এই ব্যাপারটি দেখভাল করবে ভারতের রাষ্ট্রপতি। ৩৩ লক্ষ মানুষের ছোট্ট রাজ্য মণিপুরে উপত্যকা ১০ শতাংশ ভূ-খণ্ড নিয়ে। বাকি ৯০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকা। রাজ্যের ৭৭ শতাংশে জঙ্গল আছে কমবেশি, তার মধ্যে ২৫ শতাংশে ঘন জঙ্গল। উপত্যকার অধিবাসী মূলতঃ মৈতেই-রা, যারা এই অঞ্চলে রাজত্ব করেছে দীর্ঘকাল এবং বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। মণিপুরের প্রায় ষাট শতাংশ অধিবাসী মৈতেই। পাহাড়ে বাস করে মূলতঃ নাগা, কুকি সহ অনেক জনজাতি। মণিপুর যেভাবে ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা মেনে নিতে পারেনি মৈতেইদের অনেকে, তাই ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হবে মণিপুর — এই রাজনীতি নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল অনেক সংগঠন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে মণিপুরকে “উপদ্রুত অঞ্চল” ঘোষণা করে ভারতের সরকার, এবং সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা প্রয়োগের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করতে শুরু করে নৃশংসভাবে। ২০০৪ সালে প্রাক্তন জঙ্গী থাংজাম মনোরমার ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক জনজাগরণ হয় মণিপুর উপত্যকায়, সেনাবাহিনীর আসাম রাইফেলস বিভাগ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-কে দায়ী করা হয় এই ঘটনার জন্য। এই জনজাগরণের পরে মণিপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র আন্দোলন থিতিয়ে যায়, ভারত সরকারও মণিপুর থেকে উপদ্রুত এলাকা আইন তুলে নেয় আস্তে আস্তে। বদলে মণিপুর রাজ্যের মধ্যেই মৈতেই জাতীয়তাবাদ সংগঠিত হয় প্রাক-বৈষ্ণব সানামাহি ধর্মবিশ্বাস, পুরনো মৈতেই লিপি ও সংস্কৃতি, এবং প্রাচীন মৈতেই রাজত্বের গর্ব পুনরুদ্ধারের মধ্যে দিয়ে।
৩১ আগস্ট ২০১৫
মণিপুর বিধানসভায় কোনও বিতর্ক এবং বিরোধিতা ছাড়াই তিনটি বিল পাশ হয়ে যায়, মুখ্যমন্ত্রী ইকরাম ইবোবি সিং-এর নেতৃত্বে, যেগুলি একযোগে মণিপুর পিপল বিল ২০১৫ বলে খ্যাত। এই বিলগুলিতে বলা হয় — শুধু উপত্যকায় নয়, এবার থেকে পাহাড়ি অঞ্চলের জমিও অ-মণিপুরী কেউ কিনতে পারবে না।
কুকি সংগঠনের তরফে সরকারকে বলা হয়, এই বিলগুলি পাহাড়ি অঞ্চলে বহাল না করতে। হুইয়েন নিউজ সার্ভিসের খবর।
মণিপুর সরকারের তরফে বলা হয়, এই বিলগুলি ট্রাইবালদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে না। সাঙ্গাই এক্সপ্রেস-এর খবর।
জোমি কাউন্সিলের তরফে বলা হয়, এই বিল তিনটি ট্রাইবাল স্বার্থের পরিপন্থী। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়, এই বিলগুলিতে মণিপুরী বলতে ১৯৫১ সালের এনআরসি -তে যাদের নাম আছে, ১৯৫১ সালের জনগণনায় যাদের নাম আছে এবং ১৯৫১ সালের ভিলেজ ডিরেক্টরিতে যাদের নাম আছে, তারা এবং তাদের সেই সব উত্তরপুরুষরা যারা মণিপুরের সামাজিক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে, তাদেরকেই মণিপুরী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পাহাড়ি ট্রাইবালদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মণিপুরী বলে ধরা হচ্ছে না। এই তিনটি বিলের মুখ্য উদ্দেশ্য, পাহাড়ে বসবাসকারী উপজাতিদের পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা, তারা যাতে উপত্যকায় জমি কিনতে না পারে তার ব্যবস্থা করা, এবং উপত্যকার মৈতেই-রা যাতে পাহাড়ে জমি কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করা। উল্লেখ্য, মণিপুরের আইন অনুযায়ী, উপত্যকায় বসবাসকারী মৈতেই-রা পাহাড়ে জমি কিনতে পারে না।
তিনটি বিল পাশের বিরুদ্ধে ট্রাইবাল অধ্যুষিত পাহাড় অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর এবং সদর হিল জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, স্থানীয় এমএলএ-দের বাড়ি আক্রমণ হয়, প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারী করে, অন্ততঃ তিনজন নিহত হয় পুলিশের গুলিতে। সাঙ্গাই এক্সপ্রেসের খবর।
১৯ জুন ২০১৬
কুকি বুদ্ধিজীবী জালুন হাউকিপের লেখা প্রতিবেদন, সাঙ্গাই টাইমসে প্রকাশিত, দুই কিস্তি-তে — উপত্যকার জন্য ইনার লাইন পারমিট সিস্টেম, পাহাড়ের জন্য ষষ্ঠ শিডিউল।
২৬ নভেম্বর ২০১৮
ইম্ফল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে কোবরু পাহাড়কে বাঁচানোর জন্য, যারা কোবরু পাহাড়ে ঐতিহ্যবাহী চাষবাসের বদলে আফিং এবং মারিজুয়ানা চাষ বাড়ছে, এই পর্যবেক্ষণ রেখে তা না করার জন্য পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষকে সচেতন করবে করবে। কমিটির নাম “কমিটি অন প্রটেকশন এন্ড প্রিজার্ভেশন অব মাউন্ট কোবরু” (COPPK). এর মুখ্য উপদেষ্টা তোংমাং হাওকিপ।
২৭ নভেম্বর ২০২০
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র কাছে “কাংলেইপাক কানবা লুপ” দাবি করে, নাগাচুক্তি চূড়ান্ত হবার আগেই মৈতেইদের শিডিউল ট্রাইব হিসেবে নথিভুক্ত করুক কেন্দ্র সরকার — প্রতিবেদন সাঙ্গাই এক্সপ্রেস এর।
“তাংখুল নাগা লং” একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, মণিপুর সরকার এবং নানা মাইনিং কোম্পানির মধ্যে ক্রোমাইট খননের যে চুক্তি হয়েছে নভেম্বরের ২১-২২ তারিখের উঃ-পূঃ বিজনেস সামিট-এ, তা অত্যন্ত উদ্বেগের এবং মণিপুরের পাহাড় ও জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
২ ডিসেম্বর ২০২০
থাংজিং পাহাড় এবং কোবরু পাহাড়ের লাই পুখরি — এই দুই অঞ্চলকে মণিপুরী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাসনাস্থল হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা ঘোষণা করেছে মণিপুর সরকার — এই মর্মে খবর ইম্ফল টাইমসে। ১৯৭৬ সালের “মণিপুর অ্যানসিয়েন্ট এন্ড হিস্টরিক্যাল মনুমেন্ট এন্ড আর্কিওলজিক্যাল সাইটস এন্ড রিমেইন্স অ্যাক্ট” অনুযায়ী করা হয়েছে এটা।
১৪ জানুয়ারি ২০২১
“কমিটি ফর প্রটেকশন এন্ড প্রিজার্ভেশন অফ থাংজিং এন্ড কোবরু” (CPPTK) মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানায়, শুধু থাংজিং এবং লাই পুখরি করলে হবে না, গোটা থাংজিং ও কোবরু পাহাড়কে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে, কারণ এখানে প্রায় ৩৫ টি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী উপাসনাস্থল রয়েছে।
২২ জানুয়ারি ২০২১
দ্য হিল জার্নাল-এর খবর অনুযায়ী, কাংপোকপি-র সাইটু গ্রামের প্রধান তোংমাং হাওকিপ কোবরু পাহাড়ের সরকারি সংরক্ষণ এর বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করেছে সরকারের কাছে। আপত্তির বয়ান অনুযায়ী, তোংমাং হাওকিপ গ্রাম প্রধান হিসেবে এই কোবরু পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত, মণিপুর দরবার প্রশাসনের থেকে ১৯৪৬-৪৭ সালে তার পূর্বজরা এই অধিকার পেয়েছেন। মণিপুর সরকারের কোনও অধিকার নেই তাতে হস্তক্ষেপ করার।
৩১ জানুয়ারি ২০২১
মুখ্যমন্ত্রী কোরবু পাহাড়ের বনাঞ্চল ধ্বংসের বিরুদ্ধে বনবিভাগকে দায়ী করেন এবং কোরবু পাহাড়ের বনাঞ্চল রক্ষা ও সেখানে নতুন গাছ পোঁতার নির্দেশ দেন।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মণিপুর বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বলেন, মৈতেই-দের শিডিউল ট্রাইব এর অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সরকার। ইম্ফল টাইমসের খবর।
২০ এপ্রিল ২০২১
দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুর এর রিপোর্ট, মাউন্ট কোবরু-তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য চুক্তি সম্পাদিত হল মণিপুর সরকার এবং “কমিটি অন প্রটেকশন এন্ড প্রিজার্ভেশন অব মাউন্ট কোবরু” (COPPK) র মধ্যে।
২২ এপ্রিল ২০২১
‘কোবরু পাহাড়ে সরকারের সমীক্ষা টিমকে ঢুকতে দেওয়া হবে না’, COPPK-র এই আওয়াজকে ‘কোবরু পাহাড়ে কাউকেই যেতে দেওয়া হবে না’ ভেবে নিয়ে মৈতেইদের নানা সংগঠন আহ্বান রেখেছিল, ধর্মীয়/জাতিগত রীতি মেনে কোবরু শৃঙ্গ আরোহনে সবাই যোগ দিক। মৈতেইদের কাছে কোবরু শৃঙ্গ পবিত্র, কারণ তারা মনে করে এখান থেকেই মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে কোবরু শৃঙ্গ (২৫৯২ মি) আরোহন করে, এবং শৃঙ্গে গাছ পোঁতে। দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুর এর খবর।
৯ মে ২০২১
মণিপুরের সুপরিচিত সান্ধ্য দৈনিক ইম্ফল টাইমস কাগজে একটি খবর বেরোয়, কোবরু পাহাড় পুরোটাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। প্রায় ৫৪ বর্গকিমি এলাকার এই অঞ্চলে ২৫ টি গ্রাম আছে। ওই খবরে এটাও জানানো হয়, সংলগ্ন কাংপোকপি কাংলাতম্বি বনাঞ্চল ১৯৬৮ সালেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষিত হয়েছিল, যেখানে ৪ টি গ্রাম আছে।
১১ মে ২০২১
১১ মে ইম্ফল টাইমসে একটি খবর প্রকাশিত হয়, যাতে বলা হয়, একটি অচেনা মানবাধিকার সংগঠন (ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন) কাংপোকপি কাংলাতম্বি বনাঞ্চল যে ১৯৬৮ সালে সংরক্ষিত হয়েছিল, সেই তথ্য মিথ্যে বলে দাবি করেছে। কিন্তু ইম্ফল টাইমস তা অস্বীকার করছে।
৬ জুলাই ২০২১
সাঙ্গাই এক্সপ্রেসের খবর — কোবরু পাহাড়কে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বানানোর বিরোধিতা করবে “কমিটি অন প্রটেকশন এন্ড প্রিজার্ভেশন অব মাউন্ট কোবরু” (COPPK).
২০ আগস্ট ২০২১
পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্বায়ত্বশাসন নিয়ে Manipur (Hill Areas) Autonomous District Councils Bill, 2021 মণিপুর বিধানসভায় পেশ হয়। পাহাড়ি অঞ্চলগুলির সমস্ত বিধায়কদের নিয়ে গঠিত হিল এরিয়া কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই বিল পেশ করে। এই বিল-এ পাহাড়ের জেলা কাউন্সিল গুলিকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়। ইম্ফল ফ্রি প্রেস এর খবর।
২২ আগস্ট ২০২১
মৈতেইদের সংগঠনগুলি এই অটোনোমাস কাউন্সিল বিলের বিরোধিতা করে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের কোনও কোনও নেতা মণিপুরকে ভাঙতে চাইছে।
নাগা এবং কুকি ছাত্রসংগঠনগুলি অটোনোমাস কাউন্সিল বিল, যা হিল এরিয়া কমিটি পেশ করেছে, তা যাতে সরকার আইনে পরিণত করতে ব্যবস্থা নেয়, এই দাবিতে একদিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়।
৭ মে ২০২২
থাংজিং পাহাড় যে কুকিদের অধিকারে, কুকি সংগঠনগুলির এই দাবি ভ্রান্ত বলে দাবি করে মৈতেই সংগঠনগুলি। দ্য নর্থ ইস্ট অ্যাফেয়ারের খবর।
২৩ মে ২০২২
“কুকি ছাত্র সংগঠন” (KSO) এবং “কমিটি ফর প্রটেকশন এন্ড প্রিজার্ভেশন অফ থাংজিং এন্ড কোবরু” (CPPTK) একটি সমঝোতায় আসে, থাংজিং পাহাড় নিয়ে মৈতেই এবং কুকি-রা মিডিয়া ও সামাজিক গণমাধ্যমে পারস্পরিক বিদ্বেষ বন্ধ রাখবে, সমস্ত বিদ্বেষমূলক প্রেস বিজ্ঞপ্তি তুলে নেওয়া হয়। উরখুল টাইমসের খবর।
২৪ মে ২০২২
কুকি সংগঠনগুলি থাংজিং পাহাড়ে দশ হাজার গাছ পোঁতার কর্মসূচী নেয় — ক্রনিকল নিউজ সার্ভিস-এর খবর। এই খবরেই পাওয়া যায়, এর আগে ওই পাহাড়ে বিজেপির যুব মোর্চা এক হাজার গাছ পোঁতার কর্মসূচী নিয়েছিল, এবং কুকিদের এই কর্মসূচী সম্ভবতঃ তার পাল্টা।
৪ আগস্ট ২০২২
অটোনোমাস কাউন্সিল বিল ২০২১ পাশ না করে সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর বিরোধিতা করে কিছু ব্যাখ্যামূলক একটি প্রতিবেদন বেরোয় সাঙ্গাই এক্সপ্রেস কাগজের ওয়েবসাইটে, এনগানারমি শিমরে নামক একজন সমাজকর্মীর লেখা।
৬ আগস্ট ২০২২
পাহাড়ি অঞ্চলের বিধায়কদের প্রতিবাদের মধ্যে দিয়েই সরকার বিধানসভায় পাহাড়ি অঞ্চলের জেলা কাউন্সিলগুলোর জন্য তিনটি সংযোজনী বিল (ষষ্ঠ ও সপ্তম সংযোজনী বিল ২০২২) পাশ করে। তাতে পাহাড়ি অঞ্চলের জেলা কাউন্সিলগুলোর স্বাধীনতা আরো খর্ব করা হয়।
১৬ অক্টোবর ২০২২
বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাড়ানোর ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যখন সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট পাশ করে, তার ঠিক আগেই মণিপুরে ইনার লাইন পারমিট সিস্টেম চালু করা হয়, যার কারণে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের মণিপুরে ঢোকার সময় নাম নথিভুক্ত করতে হয়। এই ইনার লাইন পারমিট সিস্টেম চালু হবার আগে মণিপুর উপত্যকায় একটা গুঞ্জন ছিল, অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা এই রাজ্যের লোকদের কাজ খেয়ে নিচ্ছে।
৩০ মার্চ ২০২৩
পিপলস ক্রণিকল নামে উপত্যকার একটি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় বের হয় — ইনার লাইন পারমিট সিস্টেমের পর এবার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হোক।
৯ এপ্রিল ২০২৩
সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আসা কুকি মিলিটান্ট গ্রুপের একটি ক্যাম্প থেকে ২৫টি আধুনিক বন্দুক ও অনেক গোলাগুলি লুঠ হয়েছে।
১১ এপ্রিল ২০২৩
মন্ত্রীপুখরি লামলোঙ্গেই গ্রামের ২৯টি বাড়ি ভেঙে দিল বন দফতর, সেগুলি লাঙ্গল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে বানানো হয়েছে সম্প্রতি, এই অজুহাতে।
১২ এপ্রিল ২০২৩
মৈতেই ছাত্র সংগঠনগুলির আহ্বানে ইম্ফলে একটি কনভেনশন হয়, মণিপুর রাজ্যে এনআরসি আপডেট করার জন্য। এতে এনআরসি করার জন্য একটি রেজলিউশন গৃহিত হয়। কনভেনশনে তথ্য দেওয়া হয়, গত এক দশকে উপত্যকার জনসংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ, আর পাহাড়ের জনসংখ্যা বেড়েছে ৪০ শতাংশ। উল্লেখ্য, এই কনভেনশনে কুকি ও নাগা ছাত্রসংগঠনেরও কিছু প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল।
১৩ এপ্রিল ২০২৩
পাহাড়ি জেলা চূড়াচাঁদপুর -এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিষয়ে সমীক্ষার জন্য বন দফতরের দুটি টিম গেলে সিয়েলমাট গ্রামে তাদের আটকে দেয় লোকে এবং তাদের ফিরে যেতে বলা হয়।
১৯ এপ্রিল ২০২৩
মণিপুর হাই কোর্ট মণিপুর সরকারকে মৈতেইদের শিডিউল ট্রাইব স্ট্যাটাস দেওয়ার দাবি বিবেচনা করে চার সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র সরকারের কাছে সাজেশন পাঠানোর জন্য বলেছে বলে খবর।
২৬ এপ্রিল ২০২৩
‘কুকি ইনপি মণিপুর’ মণিপুর হাইকোর্টের এই রায়-কে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেয়।
২৮ এপ্রিল ২০২৩
ট্রাইবাল অধ্যুষিত পাহাড়ি জেলা চূড়াচাঁদপুর -এ একটি উন্মুক্ত জিম উদ্বোধনে যাবার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-এর, কিন্তু অনুষ্ঠানের স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর হয়, ফলে এই অনুষ্ঠান বাতিল হয়।
২৯ এপ্রিল ২০২৩
অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুর (ATSUM) একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট যে তিনটি বিল পাশ হয়েছিল মণিপুর বিধানসভায়, তার পরিপ্রেক্ষিতেই পাহাড়ে জমি সমীক্ষা-কে দেখছে পাহাড়ে বসবাসকারী ট্রাইবাল-রা। এগুলো আসলে পাহাড় থেকে ট্রাইবালদের উচ্ছেদ করার ফিকির। চূড়াচাঁদপুরে মুখ্যমন্ত্রীর জিম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তা এই পাহাড়ে জমি সমীক্ষা তথা পাহাড় থেকে ট্রাইবালদের উচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে।
৩ মে ২০২৩
৩ মে মৈতেই-দের শিডিউল ট্রাইব স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ এ হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। এই মিছিলগুলির সংগঠক ছিল “অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মণিপুর”, সংক্ষেপে আটসুম। সেই মিছিলগুলির বিবরণ এবং মিছিলগুলিকে কেন্দ্র করে ইম্ফল, চূড়াচাঁদপুর, মৈরাং, মোরে, মোতবাং, কাংপোকপি, উখরুল, ননে, তেংনৌপল জেলাগুলিতে হিংসাত্মক ঘটনার উল্লেখ আছে এই খবরটিতে। খবরটি ইম্ফলের সাঙ্গাই এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের।
৩ মে মৈতেই-দের শিডিউল ট্রাইব স্ট্যাটাসের সপক্ষে নাগাল্যান্ড এবং আসামে বসবাসকারী মৈতেইদের কিছু সংগঠন মিছিল করে। ইম্ফলের সাঙ্গাই এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত খবর।
৩ মে-র খবরে “ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম”-এর পক্ষ থেকে পাঁচ দফা ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয় মণিপুরে ট্রাইবালদের বিষয়ে। তাতে বলা হয়, মণিপুর সরকার যেভাবে ট্রাইবদের সঙ্গে আলোচনা না করে জঙ্গলের কিছু অংশকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করেছে তা সংবিধানবিরোধী। আরও বলা হয়, জো-জাতির ট্রাইবদের জমি ব্যবহারের ধরন তাদের নিজস্ব, এবং তা সরকারের স্বীকার করা উচিত। এছাড়াও কিছু ট্রাইবকে যেভাবে ড্রাগ ও আফিং কারবারী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এবং প্রচার করা হচ্ছে, তারও বিরোধিতা করা হয়।
৪ মে ২০২৩
মৈতেই বনাম কুকি জাতিদাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।